অনৈতিক কাজে বাধ্য করার প্রতিশোধ নিতে স্বামীকে খুন
গাজীপুরের শ্রীপুরে এক ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যার পর এসিড দিয়ে ঝলসানোর ঘটনায় নিহতের চতুর্থ স্ত্রী ও শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১ এর সদস্যরা। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শ্রীপুরের চকপাড়ায় নিজের বাসা থেকে আবদুর রহমান (৪৫) নামে ওই ব্যবসায়ীর গলাকাটা, অর্ধগলিত ও ঝলসানো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন, আবদুর রহমানের চতুর্থ স্ত্রী সামিরা আক্তার (২৬) ও সামিরার বাবা বরিশাল জেলার উজিরপুর এলাকার মো. আলী হোসেন (৫৫)। সামিরার দাবি, অন্য পুরুষের সঙ্গে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার জেরে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ নিতে স্বামী রহমানকে খুন করেন তিনি। গত ১০ ফেব্রুয়ারি রহমানকে খুন করেন সামিরা।
আজ মঙ্গলবার র্যাব-১ এর স্পেশালাইজড কোম্পানি পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন ওই তথ্য জানিয়েছেন।
লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিম খন্ড (প্রশিকা মোড়) এলাকার মজনু মিয়ার তিন তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার ভাড়া বাসায় জমি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান তাঁর চতুর্থ স্ত্রী সামিরা আক্তার ও শাশুড়ি মালতি বেগমকে সঙ্গে নিয়ে বসবাস করতেন। পঁচা দুর্গন্ধের সূত্র ধরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তালাবদ্ধ ওই বাসা থেকে আব্দুর রহমানের গলাকাটা ও ঝলসানো অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশটি চটের বস্তায় ভর্তি করে বিছানার চাদর ও তোষক দিয়ে মুড়িয়ে রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে ছিল। ঘটনার পর থেকে সামিরা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা পলাতক থাকে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর দক্ষিনখান (কোটবাড়ি) এলাকার চাচার বাসা থেকে র্যাব-১’র সদস্যরা ওই হত্যা মামলার আসামি সামিরা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে। ওই সময় পালিয়ে যেতে সাহায্য করায় সামিরার বাবা আলী হোসেনকেও গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া সামিরা ওই খুনের ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং ঘটনার মর্মান্তিক বর্ণনা দেন।
সামিরা আক্তার জানান, গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে আব্দুর রহমান তাঁর স্ত্রী সামিরাকে ব্যবসায়িক অংশীদার রতন মিয়ার সঙ্গে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌনকাজে লিপ্ত করে। পরে রতন রাত ১১টায় বাসা থেকে চলে যায়। এঘটনায় স্বামীর ওপর ক্ষুব্ধ হয় সামিরা। এর জের ধরে ভোর রাত ৩টার দিকে ঘুমিয়ে থাকা স্বামী আবদুর রহমানকে ধারালো দা দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে তার স্ত্রী সামিরা। হত্যা নিশ্চিত হওয়ার পর লাশ বিকৃত করার জন্য এসিড দিয়ে নিহতের মুখ ঝলসে দেয়। পরে নিহতের লাশ চটের বস্তায় ভরে বিছানার চাদর ও তোষক দিয়ে পেঁচিয়ে রাখে। ঘটনার পর লাশ সরিয়ে ফেরার জন্য সামিরা তিনদিন ওই বাসায় অবস্থান করে। লাশ সরাতে ব্যর্থ হয়ে মা-বাবার সহযোগীতায় সামিরা বাসা থেকে পালিয়ে যায়। সামিরা সেখান থেকে পালিয়ে কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের এক বান্ধবীর বাসায় দুই দিন আত্মগোপন করে থাকে। পরে সেখান থেকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নওগাঁ জেলায় মামার বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করতে থাকে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মামার বাসা থেকে ঢাকার দক্ষিনখান এলাকায় চাচার বাসায় এসে আত্মগোপন করে থাকে সামিরা। সোমবার রাতে এ বাসা থেকে র্যাব সদস্যরা সামিরাকে আটক করে।
সামিরা জানান, টঙ্গীতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন ব্যবসায়ী রহমান। সামিরা ২০১৬ সালে টঙ্গী সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পরীক্ষা দেয়। সামিরা তখন বিবাহিত ছিলেন তবে রহমানের সঙ্গে তাঁর আগে থেকেই পরিচয় ছিল। সেই সুবাদে রহমানের টঙ্গীর বাসায় থেকে সামিরা ডিগ্রি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এ সুযোগে রহমান সামিরাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে কৌশলে রহমান সামিরাকে খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও ধারণও করেন আবদুর রহমান। পরে দিনের পর দিন সামিরাকে ধর্ষণ করেন রহমান। একপর্যায়ে ধর্ষণের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে সামিরার প্রথম স্বামী তাঁকে তালাক দেয়।
এরপর থেকে সামিরা শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকায় একটি ওষুধের দোকান পরিচালনা করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সামিরাকে রহমান বিয়ে করে। বিয়ের পর তাঁরা শ্রীপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। বিয়ের পর থেকে আবদুর রহমান ব্যবসায়িক স্বার্থে আবার কখনো বিপুল টাকার বিনিময়ে তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে স্ত্রী সামিরাকে যৌনকাজে বাধ্য করাতেন। ঘটনার দিন পর্যন্ত (১১ ফেব্রুয়ারি) এ ধরনের অনৈতিক কাজে সামিরাকে বাধ্য করা হয়। সামিরা এসব নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে স্বামী রহমানের কাছ তালাক চায়। কিন্তু রহমান এতে রাজী না হয়ে স্ত্রী সামিরাসহ তাঁর মা-বাবা ও ভাইকে খুন করার হুমকি দেয়। এতে স্বামীর উপর ক্ষুব্ধ হন সামিরা।