২৪ ঘণ্টায় কেমন ‘লকডাউন’ হলো শিবচরে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় চিহ্নিত দুই ওয়ার্ড ও দুই গ্রামের জনগণের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও জনসমাগমে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে প্রশাসন। খোলা থাকবে বিভিন্ন বাজারের নির্দিষ্ট কিছু দোকান। নির্দিষ্ট এলাকাগুলোতে মোতায়েন করা হবে আড়াই শতাধিক পুলিশ।
আজ শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শিবচরে অতিরিক্ত ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, আইডিসিআর স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় সভা করে এ বিধি-নিষেধ আরোপ করেন। কর্মকর্তারা এদিন বিকেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য পৌরসভার মধ্যে একটি স্কুলও পরিদর্শন করেন।
জানা যায়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক জরুরি সভার আয়োজন করে। সভায় শিবচর পৌরসভার দুই ওয়ার্ড, পাঁচ্চর ইউনিয়নের একটি গ্রাম ও দক্ষিণ বহেরাতলা ইউনিয়নের একটি গ্রামে কনটেইনমেন্ট ঘোষণা করে।
এসব এলাকার মানুষদের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। উপজেলার গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এরপর আজ সকাল থেকেই এ উপজেলা থেকে সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। পৌরসভাসহ বিভিন্ন বাজারের বেশ কিছু দোকান বন্ধ দেখা গেছে। বিভিন্ন স্থানে জনসমাগমও কম দেখা গেছে।
আজ বিকেল ৩টার দিকে অতিরিক্ত ডিআইজি নূর-ই আলম মিনা শিবচর থানায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এরপর পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি বৈঠক ডাকা হয়।
বৈঠকে জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. মাহবুব হাসান, সিভিল সার্জন ডা. মো. শফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার আবির হোসেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শশাঙ্ক ঘোস, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তঅ (ওসি) আবুল কালাম আজাদসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দ্রব্যমূল্য লাগামহীন
স্বাস্থ্য বিভাগ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ ঝুঁর্কিপূণ হিসেবে ঘোষণা করেছে শিবচর উপজেলাকে। আর এরই প্রভাবে আতঙ্কিত মাদারীপুরের অন্য উপজেলার মানুষও। এই সুযোগে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। যদিও প্রশাসন বলছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ রাখা হবে।
জেলার এ উপজেলায় ওষুধের দোকান, কাঁচাবাজার ও মুদি দোকান ছাড়া বাকি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণার পরে থেকে জেলা জুড়েই এর প্রভাব প্রভাব পড়েছে। হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। শিবচরের বিভিন্ন হাট-বাজার জনশূন্য হয়ে গেছে। আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, মাদারীপুর জেলায় সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরেছে অন্তত তিন হাজারের বেশি প্রবাসী, যার অধিকাংশই শিবচর উপজেলার বাসিন্দা। যে কারণে এই পর্যন্ত যাঁরা করোনভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তার বেশিরভাগই শিবচরের। তাই হোম কোয়ারেন্টিন মেনে চলার নির্দেশ সির্ভিজ সার্জনের।
এখানে করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪৯ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ৩১ জনের ‘হোম কোয়ারেন্টিন’ শেষ হওয়ায় তাদের মুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে মাদারীপুর জেলায় সর্বমোট ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ আছে ২৬৩ জন এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্তের উপসর্গ দেখা দেওয়ায় আইসোলেশনে রয়েছে চারজন।
এ ছাড়া তিনজনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালের নতুন ১৫০ শয্যা ভবনে আইসোলেশন ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে।
এদিকে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক বলছেন, ‘এ সুযোগে যারা দ্রব্যমূল্য বাড়াবে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।’ তিনি শিবচর উপজেলাকে অধিক ঝূঁকিপূর্ণ দাবি করেন।
মাদারীপুরের চার উপজেলা, চার পৌরসভা ও ৬০টি ইউনিয়নে করোনা প্রতিরোধে কমিটি করেছে প্রশাসন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে একটি সেলও গঠন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান প্রশাসনের।