হাস্যকর বক্তব্য না দিয়ে বিএনপির উচিত দলটাকে সংগঠিত করা : তথ্যমন্ত্রী
ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টায় সফল হতে না পেরে বিএনপির এখন গাত্রদাহ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সরকারের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির যে অভিযোগ তুলেছেন তার জবাবে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আজ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী। সভায় বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সৈয়দ মোক্তার আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দীন বক্তব্য দেন। ভার্চুয়াল সভায় যোগ দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি চেয়েছিল ইতিহাসের খলনায়ককে নায়ক বানাতে। বিদ্যালয়ের দপ্তরিকে প্রধান শিক্ষক বানানোর অপচেষ্টায় ছিল তারা। দেশের মানুষ যখন সঠিক ইতিহাস জানতে শুরু করেছে, তখন বিএনপি নেতাদের গাত্রদাহ হচ্ছে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এখনো বিএনপি নেতৃবৃন্দ প্রতিদিন সরকারকে টেনে নামানোর কথা বলছেন। এর মধ্যেই প্রায় এক যুগ ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারকে টেনে নামাতে গিয়ে বিএনপিই এখন রশি ছিঁড়ে নিচে পড়ে গেছে। তাদের উচিত এসব হাস্যকর বক্তব্য না দিয়ে দলটাকে সংগঠিত করা।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া বলেছিলেন, এই সরকার কখনো পদ্মা সেতু করতে পারবে না। তাদের বলবো, পদ্মা পাড়ে গিয়ে দেখে আসুন। ঢাকা শহরে মেট্রোরেল ও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেল আগামী বছর চালু হবে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সাল নয়, তার অনেক আগেই ইনশা আল্লাহ বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো বদলে যাওয়ার অগ্রগতির গল্প যদি বিশ্ববাসীকে জানান দিতে হয়, শেখ হাসিনাকে একটু সময় দিতে হবে। তাঁর হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।
‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে। বঙ্গবন্ধুর সফলতা সেখানেই, যেই পাকিস্তান সংশয় প্রকাশ করত বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে টিকবে কি না। সেই পাকিস্তানের মানুষ শুধু নয় তাদের প্রধানমন্ত্রীও আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি দেখে আক্ষেপ করেন। আমরা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানব উন্নয়নের সমস্ত সূচকে পাকিস্তানকে অতিক্রম করেছি কয়েক বছর আগে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর পাকিস্তানের ৭০ বছর; বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের আমাদের তিন ভাগের এক ভাগ। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৬৪ ডলার, পাকিস্তানের এক হাজার ৮০০ ডলারের নিচে। শুধু পাকিস্তানকে নয়, সামাজিক ও মানব উন্নয়ন সূচকে আমরা ভারতকে অতিক্রম করেছি অনেক আগে। এই করোনাকালে যেখানে পৃথিবীর মাত্র ২২টি দেশ পজিটিভ ইকোনোমিক জিডিপি গ্রোথ রাখতে সক্ষম হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।’ যোগ করেন তথ্যমন্ত্রী।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ভারত পাকিস্তানের গণমাধ্যমে ঝড় উঠছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করছে। কিন্তু একটি পক্ষ প্রশংসা করতে পারে না। বিএনপি আর তার দোসরেরা দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না; চোখ থাকিতে অন্ধ, কান থাকিতে বধির।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু বাঙালির নেতা নয়, তিনি বিশ্ব প্রেক্ষাপটে একজন বিশ্বনেতা এবং নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের কণ্ঠস্বর। তিনি শুধু বাংলাদেশ সূচনা করেছেন তা নয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যখন আমরা অর্জন করি, তখন সমগ্র দেশ পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছিল। সমস্ত ব্রিজ, কালভার্ট বিধ্বস্ত করেছিল। সেই দেশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পুনর্গঠিত করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, তখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে রেকর্ড ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, তাঁকে হত্যা করার ৪০ বছর পর পর্যন্ত কেউ সে রেকর্ড অতিক্রম করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমরা সেই রেকর্ড অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হলে দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার বহু আগেই বাংলাদেশের সমৃদ্ধির গল্প শুনত পৃথিবীর মানুষ। বঙ্গবন্ধুকে তারাই হত্যা করেছিল যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি।