হাতজোড় করলেন শামীম ওসমান, চিকিৎসকদের যা বললেন
করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবের সময় মানুষ যাতে কোনো কারণেই চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হন তার জন্য চিকিৎসকদের উদ্দেশে হাতজোড় করে অনুরোধ করেছেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর চাষাঢ়া রাইফেলস ক্লাবে খেটে খাওয়া অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ব্যক্তিগত সহায়তা প্রদান এবং সিভিল সার্জনের কাছে একটি গার্মেন্ট কোম্পানির দেওয়া ৪০০ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম (পিপিই) হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
এ সময় সংসদ সদস্য যদি সম্ভব হয় তাহলে ভাড়াটিয়াদের এক মাসের বাড়িভাড়া এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সিটি করপোরেশনের কর মওকুফেরও আহ্বান জানান।
এই বক্তব্য এমন একটি সময়ে এলো, যখন বিভিন্নভাবেই গণমাধ্যমে খবর আসছে যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন এমন রোগীরাও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক বা চেম্বারগুলোতে চিকিৎসা পাচ্ছ্নে না। পাঁচ-ছয়টি হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসা না পেয়ে বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর খবর এসেছে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও। স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরনের আচরণকে অমানবিক উল্লেখ করে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনাও করছেন।
করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে অনেক মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেন না উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘ডাক্তাররা অনেক পরিশ্রম করছেন। কিন্তু কিছু কিছু ক্লিনিক রোগী হয়তো অন্যরোগে আক্রান্ত, সঙ্গে একটু কাশি আছে; কী হয়েছে হয়তো তাঁর হার্টে সমস্যা হয়েছে- এ কারণে কাশি হচ্ছে। এ ধরনের রোগী গ্রহণ করছেন না। এটা সঠিক হচ্ছে না।’
এক্ষেত্রে সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসনের কঠোর হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ‘রোগ কিন্তু শুধু করোনাভাইরাস না। মানুষের ব্রেন স্ট্রোক হচ্ছে, হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে, কিডনি রোগ হচ্ছে, ডায়াবেটিকস হতে পারে, অন্য রোগও তো হতে পারে।’
‘আমি হাতজোড় করে বলছি, যারা মেডিকেল সায়েন্সে আছেন, এ ধরনের রোগীরা যেনো চিকিৎসাবঞ্চিত না হন। যারা মেডিকেল সায়েন্সে আছেন ও যারা নারায়ণগঞ্জে ক্লিনিকে আছেন তাদের বললো, এখনি আসল সময় মানুষকে সেবা করার, আল্লাহকে খুশি করার। আপনার নিজের জীবনকে সার্থক করার, যে আমি মানুষের জন্য কিছু করলাম।’
চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দিকটির কথাও উল্লেখ করেন শামীম ওসমান। তিনি বলেন, ‘আপনি নিজের প্রোটেকশন নেন, পিপিই নেন ও পরেন এবং মানুষকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। আল্লাহই আপনাকে হেফাজত করবে। এই দুঃসময়ে যারা পাশে থাকবেন না, সুসময় যখন ফিরে আসবে তখন আমরাই তাদেরকে বর্জন করে দিবো। কারণ এটা তাদের কর্তব্য আমাদের রক্ষা করা। আমি বলতেছি না করোনাভাইরাসকে আপনারা প্রোটেকশন করেন কোনো প্রোটেকশান ছাড়া। কিন্তু অন্যরোগী যেমন- হার্টের রোগী বা অন্য রোগী তারা যাবে কোথায়?’
সংসদ সদস্য আরো বলেন, ‘যারা বাড়িওয়ালা আছেন, যদি পারেন এক মাসের ভাড়া মওকুফ করেন। এটা মুসলমানদের জন্য পরিপূর্ণ জাকাত হবে। সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করবো, যদি সম্ভব হয় বলে দেন বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে হোল্ডিং টেক্স নিবেন না। ছোট ছোট দোকানদার দোকান বন্ধ করে বসে আছে। তাদের পুঁজি শেষ হয়ে যাবে। তাদের টেক্সটা নিয়েন না। অন্ততপক্ষে ছাড় দেন। কম খাবো, কম পড়বো- সবাই মিলে ভালো থাকাটা হলো এখন আমাদের জন্য শ্রেয়।’
করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘গুজব যেনো কেউ না করে, এই ধরনের গুনাহটা এখন কেউ কইরেন না। এটা একটা পাপের কাজ। গুজব ছাড়ালে একটা মানুষ আতঙ্কিত হয়। এতে প্যানিক অ্যাটাক হয়। প্যানিক অ্যাটাক একটি মারাত্মক জিনিস। আপনার একটা গুজবের কারণে যদি প্যানিক অ্যাটাক হয় তাহলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাবেন না। তাই আমরা এই গুজব না ছড়িয়ে মানুষকে সচেতন করতে পারি। আল্লাহর জন্য, মানুষের জন্য যে উদ্দেশ্য নিয়ে আপনারা কাজ করছেন আল্লাহ আপনাদের হায়াত বাড়িয়ে দেন।’