‘স্যার আমার রিমান্ডটা একটু কনসিডার করেন’
দুদকের দায়ের করা অর্থ আত্মসাতের মামলায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের সাত দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন।
রিমান্ড শুনানি উপলক্ষে আজ দুপুর ১২টায় সাহেদকে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে হাজির করে পুলিশ। হাজিরের পরে সাহেদ এক পুলিশ সদস্যকে বলেন, ‘স্যার আমার হেলমেট ও হাতকড়া খুলে দেন।’ এরপর পুলিশ তাঁর হেলমেট ও হাতকড়া খুলে দেয়। পরে সাহেদ পানি খেতে চান। এর পরই তাঁকে পানি খেতে দেওয়া হয়।
পানি খাওয়ার কিছুক্ষণ পরই আদালতে রিমান্ড বিষয়ে শুনানি শুরু হয়।
রিমান্ড শুরুর প্রথমে বিচারক সাহেদকে জিজ্ঞেস করেন, তাঁর কোনো আইনজীবী আছে কি না। জবাবে সাহেদ বলেন, ‘স্যার আমার কোনো আইনজীবী নেই। আমি নিজেই কিছু বলব।’
এরপর সাহেদ বিচারককে বলেন, ‘স্যার আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামে ৫০ লাখ টাকার এফডিআর (স্থায়ী আমানত) ছিল। আমরা এফডিআর দেখিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছি। তার সব এভিডেন্স রয়েছে। আমি কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি।’
এরপর রিমান্ডের পক্ষে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানিতে বলেন, ‘সাহেদ এমআরআই মেশিন কেনার জন্য দুই কোটি টাকার প্রয়োজন বলে ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। সেই টাকা দিয়ে মেশিন না কিনে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেন। তাই তাঁর রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।’
এরপর সাহেদ বিচারককের উদ্দেশে বলেন, ‘স্যার আমি অসুস্থ। আজ ২০ দিন ধরে রিমান্ডে আছি। এখনো ২৭ দিন রিমান্ডে থাকতে হবে। আমার রিমান্ডটা একটু কনসিডার করেন।’ এর পরই বিচারক সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
গত ২৮ জুলাই সাহেদকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত গত ৫ আগস্ট সাহেদের গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। কিন্তু সাহেদ অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় এ আবেদনের শুনানি হয়নি। পরে বিচারক তাঁর উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির জন্য ১০ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ২৭ জুলাই দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ বাদী হয়ে সাহেদ, ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটির সভাপতি মো. মাহবুবুল হক চিশতীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, রিজেন্ট হাসপাতালের এমডি, মাহবুবুল হক চিশতীর ছেলে ও বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের এমডি রাশেদুল হক চিশতি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, রিজেন্ট হাসপাতালের জন্য ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখা থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে এমআরআই মেশিন কেনার জন্য দুই কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেন মো. সাহেদ। অথচ ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ও ক্রেডিট রিস্ক গ্রেডিং নিরূপণ না করেই ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটির সভাপতি মো. মাহবুবুল হক চিশতী ঋণ অনুমোদন করেন।
পরে ওই বছরের ১৫ জানুয়ারি ২১তম সভায় সাহেদের অনুকূলে দুই কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন হয়। যা পে-অর্ডারের মাধ্যমে ও এমআরআই মেশিন কেনা হয়েছে এমন জাল কাগজপত্র দেখিয়ে ২১ জানুয়ারি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা মহিলা শাখার মাধ্যমে দুই কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়।
তবে শর্তানুযায়ী এক কোটি টাকার এফডিআর করতে হয় সাহেদকে। কোনো কিস্তি পরিশাধ না করায় ঋণ হিসাবটি অনিয়মিত হওয়ার কারণে ব্যাংকের কাছে লিয়েন থাকা ওই এফডিআর থেকে এক কোটি টাকা সমন্বয় করা হয়। আর বাকি এক কোটি টাকা আনাদায়ী থেকে যায়। যা এখন সুদসহ দুই কোটি ৭১ লাখ টাকা হয়েছে। সাহেদ ঘুষ বাবদ ৩৫ লাখ টাকা বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমেটেড নামের প্রতিষ্ঠানের হিসাব নম্বরে (হিসাব নম্বর-০১১১১০০০০২৩৬৩) জমা করেন। যে প্রতিষ্ঠানটির এমডি রাশেদুল হক চিশতি।
গত ২২ জুলাই এনআরবি ব্যাংক থেকে হাসপাতালের নামে ঋণ বাবদ দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।