স্ত্রী হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হাইকোর্টে খালাস
বরিশালে কোহিনূর বেগম নামের এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগে স্বামী মোস্তফা সরদারকে নিম্ন আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও মোহাম্মদ নোয়াব আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুনুর রশিদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী বশির আহমেদ, জাহিদ আহাম্মদ ও মোহাম্মদ শফিকুজ্জামান।
আইনজীবী শিশির মনির এমটিভি অনলাইনকে জানান, সব বিষয় বিচার বিশ্লেষণ এবং চিকিৎসা সনদপত্র অনুসারে কোহিনূর আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। তাই তাঁর স্বামী মোস্তফা সরদার খালাস পেয়েছেন।
স্ত্রী হত্যার দায়ে ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর বরিশালের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়েরা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক আদীব আলী মোস্তফা সরদারকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
আইন অনুযায়ী, এ মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পরে আসামিও আপিল করেন।
গৌরনদী উপজেলার কসবা এলাকার বাসিন্দা আসমত আলী সরদারের মেয়ে কোহিনূর বেগমের সঙ্গে একই এলাকার বাসিন্দা হাতেম আলী সরদারের ছেলে মোস্তফা সরদারের বিয়ে হয়। তাঁদের দুই ছেলে ও এক মেয়েসন্তান রয়েছে।
জানা যায়, ঘটনার দুই মাস আগে মোস্তফা সরদার একই এলাকার লাল মিয়ার স্ত্রী বুলু বেগমকে বিয়ে করেন। এ নিয়ে মোস্তফা সরদার ও কোহিনূর বেগমের মধ্যে পারিবারিক কলহ দেখা দেয়। এ বিয়ের পর থেকে কোহিনূরকে প্রায়ই মারধর করতেন মোস্তফা।
২০১০ সালে কোহিনূর বেগমের বাবা আসমত আলী সরদার পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা সরোয়ার পাইকের স্ত্রী হাসি বেগমের মাধ্যমে জানতে পারেন তাঁর মেয়েকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ঘটনায় তিনি ও স্বজনেরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে কোথাও পাননি। পরে একই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি মোস্তফা সরদারের চৌচালা ঘরের মাচার আড়ার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় কোহিনূরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে কোহিনূর বেগমের বাবা ওইদিনই বাদী হয়ে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগে পাঁচ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন। একই বছরের ৩১ মে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহজালাল খলিফা তিন জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
সাত জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মোস্তফার দ্বিতীয় স্ত্রী বুলু বেগম ও তাঁর আগের স্বামী লাল মিয়াকে খালাস দেন। এবং অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় মোস্তফা সরদারকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ২০১ ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন।