সরকারের লোকদের বেশি মাস্ক পরা দরকার : নজরুল
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘আজ করোনার ভয়ে আমরা মাস্ক পরে থাকি। কিন্তু যারা সরকারে আছেন তাদের একটা নয় আরো বেশি মাস্ক পরা দরকার। কারণ তারা শুধু কোভিডে নয়, আরো অনেক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেছে। এ দেশে দুর্নীতি-অনাচার আজ করুণ অবস্থায় চলে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলে আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি হতে চাই না, আমরা ডিজির ড্রাইভার হতে চাই। এই বিশ্বের তিনজন ধনী ড্রাইভারের মধ্যে বাংলাদেশে একজন আছেন।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে যেভাবে দুর্নীতি-অনাচার ছড়িয়ে পড়েছে সেই ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য সরকারের লোকজন যাঁরা দল করেন, তাঁদের উচিত দুর্নীতিবিরোধী একটি ভাইরাস প্রতিরোধকারী মাস্ক পরা। দুইটা মাস্ক হলেও কিন্তু হবে না। অতিসম্প্রতি নারী নির্যাতন যেভাবে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে সেই নারী নির্যাতনের যে ভাইরাস সেটা থেকে বাঁচার জন্য এ সরকারের লোকজনের তিন নম্বর মাস্ক পরা উচিত। এই তিনটা মাস্ক পরলে ভাইরাস থেকে তাঁরা কিছুটা বাঁচবেন আর লজ্জা থেকে বাঁচার জন্য মুখটা ঢেকে রাখতে পারবেন।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ মঙ্গলবার ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে অন্যায়ভাবে অব্যাহতি ও সিলেটের এমসি কলেজে ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত এক মানববন্ধনে নজরুল ইসলাম খান এসব কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘আপনাদের কত বড় বড় নেতা বছরের পর বছর শহীদ জিয়া সম্পর্কে, খালেদা জিয়া সম্পর্কে, তারেক রহমান সম্পর্কে কত অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। কী লাভ হয়েছে তাতে? জনগণ কি শহীদ জিয়াকে ভুলে গেছে? জনগণের যে শ্রদ্ধা তার প্রতি সেটাকে কি কমাতে পেরেছেন আপনারা, নাকি খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা কমেছে? যদি তাই হতো তাহলে আপনারা উঠতে-বসতে শয়নে-স্বপনে তাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতেন না। এটাকে তারেক রহমান-ফোবিয়া বলতে পারেন বা খালেদা জিয়া-ফোবিয়া বলতে পারেন। এরও চিকিৎসা দরকার। কিন্তু টিভিতে এসব নাটক প্রচার কোনো চিকিৎসা নয়। কারণ মানুষ এটাকে রাজনীতিতে খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত হিসেবে মনে করে। খারাপ দৃষ্টান্ত আপনারা স্থাপন করলেন, এ দৃষ্টান্ত যেন আল্লাহ না করুক ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না হয়। এভাবে রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন করে আমরা রাজনীতি সম্পর্কে মানুষকে নিরুৎসাহিত করে দিচ্ছি, যেটা দেশের জন্য ক্ষতিকর, গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।’
বিএনপির নেতা আরো বলেন, ‘বিএনপি সেই দল, যে দলের নেত্রী নয় বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াই করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। বিএনপি সেই দল, যে দল ২০০৭ সালে ঘোষণা করেছিল জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার না করলে আমরা নির্বাচনে যাব না। গণতন্ত্রের জন্য আপনাদের (সরকার) কাছে আবেগ কম, আমরা জানি। কিন্তু বাংলার মানুষের কাছে গণতন্ত্রের জন্য আবেগ অনেক। গণতন্ত্র হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ ফসল। আমরা রক্ত দিয়ে গণতন্ত্র অর্জন করেছি, আগামী দিনেও গণতন্ত্র রক্ষা করব। আমরা ঊনসত্তরে এটার প্রমাণ দিয়েছি, একাত্তরে প্রমাণ দিয়েছি, নব্বইয়ে প্রমাণ দিয়েছে। প্রয়োজনে আগামী দিনেও দেব।’
ভিন্নমতের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একজন যোগ্য শিক্ষককে একটি নিবন্ধন লেখার অপরাধে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আর একজন শিক্ষকের কথা আপনারা শুনেছেন, যিনি সোশ্যাল মিডিয়াতে একটা পোস্ট দিয়েছিলেন। যার জন্য শুধু চাকরি যায়নি, তিনি এখন দেশে থাকতে পারেননি। একইভাবে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অসংখ্য মানুষ তার গণতান্ত্রিক মতপ্রকাশে কারণে এই সরকারের অনুগত প্রশাসনের ধারায় চাকরিচ্যুত কিংবা অন্যভাবে বিপদাপন্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যারা শ্রদ্ধেয় মানুষ বলে পরিচিত, তাঁরা কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। কিন্তু তাঁরা পারেন, যাঁরা নামে শিক্ষক, কিন্তু আসলে প্রশাসনে অনুগত ব্যক্তি।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এই ভিসি তো তিনি, যিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সরকারের ভাষায় সন্ত্রাসী বলেছিলেন। তাদের কাছ থেকে সুবিচার আশা করার কোনো কারণ নেই। আইন ভঙ্গ করে অন্যায়ভাবে যাঁদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাঁদের পুনর্বহাল তো অবশ্যই আমরা দাবি করব। আজকে যদি বাস্তবায়িত না হয় ইনশা আল্লাহ আগামী দিনে হবে। কিন্তু আমাদের সমস্যা তো একটা নয়। আমরা অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত।’