সন্তানের জন্ম সকালে, বিকেলে করোনায় মারা গেলেন মা
শুক্রবার ভোর। রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয় করোনায় আক্রান্ত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভির বার্তা বিভাগের সহযোগী প্রযোজক রিফাত সুলতানাকে। জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়ছিলেন করোনা থেকে বাঁচতে। সকাল ১০টা ২০ মিনিট। তখনও তিনি অচেতন। এমন মুহূর্তে এক কন্যার জন্ম দেন রিফাত সুলতানা।
কন্যাসন্তান যখন পৃথিবীর আলো দেখল তখনও রিফাত সুলতানা অচেতন অবস্থায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। অচেতন অবস্থার মধ্যেই বিকেলের দিকে রিফাত সুলতানার মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ ঘটে। শেষমেশ বিকেল ৪টার দিকে তিনি সবাইকে কাঁদিয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
কন্যাসন্তানটির জন্ম হয়েছে ৩৪ সপ্তাহে। জটিলতা এড়াতে শিশুটিকে হস্তান্তর করা হয় রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে। এখন শিশুটি সেখানে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটি শঙ্কামুক্ত।
এদিকে রিফাত সুলতানার স্বামী নাজমুল ইসলাম ও শ্বশুর করোনা পজিটিভ। শুধু তাই নয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইমপালস হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রিফাত সুলতানার শাশুড়িও। এ ঘটনায় শোকে বিহ্বল একাত্তর টেলিভিশনের সহকর্মী ও রিফাত সুলতানার পরিবার।
রাতে একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা রূপা ও নির্বাহী প্রযোজক সিকদার লোটাস সবুজ এসব তথ্য এই প্রতিবেদককে জানান।
ফারজানা রূপা বলেন, ‘আজ ভোরে রিফাত সুলতানাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া হয়। সকালে যখন শিশুটির জন্ম হয়, তখন রিফাত অচেতন ছিলেন। তারপর কন্যাশিশুটিকে নেওয়া হয় এভার কেয়ার হাসপাতালে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটি এখন শঙ্কামুক্ত।’
‘রিফাত সুলতানা জন্ম দিলেও একনজর দেখতে পারেননি সদ্যজাত সন্তানকে। শিশুসন্তানটিও আর কখনও তার মাকে দেখতে পাবে না। কিছুই ভাবতে পারছি না। এমন বাস্তবতা যেন আর কোনো মা-সন্তানের ক্ষেত্রে না হয়।’
ফারজানা রূপা আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা একাত্তর টেলিভিশন পরিবার শোকাহত। ওই পরিবারকে কোনো ধরনের সমবেদনা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। হাসপাতাল থেকে রিফাত সুলতানার লাশ তাঁর বনশ্রীর বাসার নেওয়া হয়। সেখান থেকে একাত্তরের কার্যালয়ে নিয়ে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তারপর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে রিফাত সুলতানাকে দাফন করা হবে।’
নির্বাহী প্রযোজক সিকদার লোটাস সবুজ বলেন, রাত সোয়া ৯টার দিকে রিফাত সুলতানার লাশ একাত্তর টিভির বারিধারার কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে প্রথম জানাজা সম্পন্ন করে পুনরায় লাশ নেওয়া হবে বনশ্রীর বাসায়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন করা হবে। পরে ভোরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
‘গত ৫ এপ্রিল রিফাত সুলতানা করোনায় আক্রান্ত হন। রিফাত সুলতানার দুই যমজ ছেলেসন্তান রয়েছে। এ ঘটনায় আমরা শোকাহত। ২০১১ সালে একাত্তর টেলিভিশনের শুরুতে রিফাত সুলতানা সহকারী প্রযোজক হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে’, যোগ করেন নির্বাহী প্রযোজক।