সংঘর্ষ নয়, পিটিয়ে ৩ কিশোরকে হত্যার অভিযোগ
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে দুইপক্ষের সংঘর্ষে তিন কিশোর নিহত হয়নি; বরং তাদেরকে ‘একতরফা’ পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিশ।
গতকাল বৃহস্পতিবারের এ ঘটনায় আহতদের জবানিতেও বেরিয়ে এসেছে নির্মমভাবে পেটানোর বর্ণনা। তাদের অভিযোগ, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের একটি অংশের যোগসাজশে কয়েকজন বন্দি কিশোর অপর বন্দিদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়।
যদিও গতকাল এ ঘটনার প্রায় ছয় ঘণ্টা পর যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের দাবি ছিল, কেন্দ্রের বন্দি কিশোরদের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে তিন কিশোর নিহত ও ১৪ কিশোর আহত হয়।
আহত কিশোররা বর্তমানে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সেখানে অন্তত ছয়জন কিশোরের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছে এনটিভি অনলাইন। তারা গতকাল দুপুর থেকে বিকেলে পর্যন্ত কেন্দ্রের ভেতরে অন্তত দুইদফায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হওয়ার বর্ণনা দিয়েছে।
কিশোরদের ভাষ্যমতে, এ ঘটনার সূত্রপাত গত ৩ আগস্ট। এদিন কেন্দ্রের প্রধান নিরাপত্তাকর্মী নূর ইসলাম কয়েকজন কিশোরকে তার মাথার চুল কেটে দিতে বলেন। এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই নিরাপত্তাকর্মী পরিচালকের কাছে কিশোরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন যে, তারা মাদকাসক্ত। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বন্দিদের কয়েকজন নূর ইসলামকে মারপিট করে। তারপরই তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন নেমে আসে।
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রটি জেলা শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরের শহরতলী পুলেরহাট এলাকায় অবস্থিত। এখানে প্রায় ২৮০ জন কিশোর বন্দি রয়েছে।
এ ঘটনার পর গতকাল রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান পুলিশের খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এ কে এম নাহিদুল ইসলাম। তিনি আহতদের বরাত দিয়ে সরাসরি বলেছেন, এটি কোনো সংঘর্ষের ঘটনা নয়, একেবারেই একপক্ষীয় ঘটনা।
রাত প্রায় আড়াইটার দিকে এ ঘটনা নিয়ে যখন অতিরিক্ত ডিআইজি নাহিদুল উন্নয়ন কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করছিলেন, তখন একজন সাংবাদিক কথা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, ‘… এখানে বলা হয়েছে, দুপুর ২টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে…।‘
তখন ওই সাংবাদিককে থামিয়ে দিয়ে নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বলি আপনাকে, সংঘর্ষ বলে যে শব্দটা ইউজ করলেন, সেটা নিয়ে ইয়ে আছে। শুধু আমি বলব, এটা একপক্ষীয়, আজকের ঘটনাটা।‘
ঘটনাটি প্রায় ছয় ঘণ্টা পর জানার তথ্য দিয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘যার ফলে মূল ঘটনাটি জানা একটু জটিল ও সময়সাপেক্ষ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।‘
এ ঘটনায় হাসপাতালে আহত হয়ে যে ১৪ জন বন্দি কিশোর চিকিৎসাধীন রয়েছে তারাই এই ঘটনার ‘সবচেয়ে বড় সাক্ষী’ বলে উল্লেখ করেন ডিআইজি নাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সিরিয়াসলি আহত ব্যক্তি মিথ্যা না বলাটাই… কোর্টও ধরে নেয়… মৃত্যুপথযাত্রী হয়তো মিথ্যা বলবে না। যে কারণে আহত কিশোরদের কথার সত্যতা ও যৌক্তিকতা অবশ্যই আছে। সেটা বিবেচনায় নিয়েই আমাদের অনুসন্ধান বা তদন্ত চালাতে হবে।‘
সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আপনারা এটা জানতে পারছেন অনেক পরে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। আমি রাত ১০টা ৫ মিনিটে জানতে পারছি, রাত ১০টা ২০ মিনিটে রওয়ানা হইছি খুলনা থেকে।‘
গতকাল বৃহস্পতিবারের ঘটনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল মাসুদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে সবশেষ আজ শুক্রবার এ ঘটনায় নিহত রাব্বির বাবা রোকা মিয়া বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেছেন।