শিপ্রা ও সিফাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে : র্যাব
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান (অবসরপ্রাপ্ত) হত্যা মামলার সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
আজ সোমবার বিকেলে র্যাবের সদর দপ্তরে এই সংবাদ সম্মেলনে আশিক বিল্লাহ এই তথ্য জানান। এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘আত্মসমর্পণকারী চার আসামি জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। এই চার আসামির কাছ থেকে আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তাই র্যাবের পক্ষ থেকে আদালতে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।’
এই সংবাদ সম্মেলনের কিছু আগেই মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের (অবসরপ্রাপ্ত) সহযোগী সিফাত কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান। আর অপর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথকে গতকাল রোববার মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা একটি মামলায় জামিন দিয়েছিলেন আদালত। পরে তিনি বিকেলে কারাগার থেকে মুক্তি পান।
আজ বিকেলে র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক এই মামলার সিজার লিস্ট নিয়ে জানতে চান। মামলার সিজার লিস্টে ল্যাপটপ বা ক্যামেরার নাম না থাকার বিষয়ে র্যাবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ওই সাংবাদিক।
তখন জবাবে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, ‘আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের আগে আমরা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সিফাত এবং শিপ্রাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। শিপ্রা ও সিফাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়ে আমরা পূর্বতন যারা (মালামাল) জব্দ করেছেন তাঁদের এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব। অর্থাৎ কেবল কোনো খবরের ভিত্তিতে বা কোনো তথ্যের ভিত্তিতে না গিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রথমত সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ সাপেক্ষে এসব ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পেলে সেই অনুযায়ী তিনি এগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করবেন।’
এ সময় র্যাব কর্মকর্তা মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার কথা উল্লেখ করে আরো বলেন, ‘র্যাব অকুণ্ঠ চিত্তে বলতে চায়, এই মামলাটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে এবং প্রভাবমুক্ত হয়ে তদন্ত করবে। এই মামলার অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য প্রকৃত আসামীদের শনাক্ত করা এবং এর পাশাপাশি ঠিক কী কারণে এ রকম একটি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে, তা র্যাব তদন্ত করবে।
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ রোডে টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পরিদর্শক লিয়াকত আলী, ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
৬ আগস্ট বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপসহ সাত আসামি কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। মামলার শুনানিতে র্যাবের পক্ষে প্রত্যেক আসামির ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত লিয়াকত, প্রদীপ ও নন্দ দুলাল রক্ষিতকে সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকি চারজনকে দুই দিন কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। অন্য দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
গত ৩১ জুলাই রাতে সিনহা নিহতের ঘটনার পর পুলিশের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কক্সবাজার কারাগারে ছিলেন বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।
নিহত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের সঙ্গে কক্সবাজারে প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজ করছিলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির তিন শিক্ষার্থী—শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও তাহসিন রিফাত নূর। পুলিশ সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মাদক দ্রব্য ও হত্যা মামলা এবং কক্সবাজারের রামু থানায় শিপ্রার বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য আইনে মামলা করে। এ ছাড়া তাহসিন রিফাত নূরকে অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।