শহুরে ফুটপাতে মাসহ দুই শিশুর দিন-রাত
খাদিজার বয়স দুই, খোদেজার বয়স সাড়ে তিন। দিন কিংবা রাতে মায়ের সঙ্গে শহুরে রাস্তায় দিন কাটে তাদের। কখনো ভিক্ষা করে, কখনো আবার কাগজ কুড়িয়ে খাবারের মুখ দেখতে হয় মাসহ দুই মেয়ের।
তাদের বাবা আছে, তবে দেখেন না তিনি। রিকশা চালিয়ে অন্য সংসারের ঘানি টানলেও বিমুখ রাখেন খাদিজাদের। মা আশুরা বেগম কোনোমতে নিজে না খেয়ে খাওয়ান সন্তানদের।
তবে বাবা হালিম মাঝেমধ্যে তাদের দেখতে আসেন। হাতে কয়েকটি টাকা কিংবা খাবার ধরিয়ে দিয়ে তিনি বিদায় নেন। তাই টাকা জোগাড় করতে না পেরে, কখনো না খেয়ে কিংবা অল্প খেয়ে জীবন কাটে তাদের।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার ফুটপাতে অধিকাংশ দিন-রাত কাটান আশুরা বেগম। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারের আন্ডারপাস প্রজাপতি গুহার পাশের ফুটপাতে তাদের দেখা যায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে।
তখন আশুরা বেগম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার আব্বা-মা দুই জাইগায় নিকা (বিয়ে) করে আবার। ৫ বছর বয়স থেইক্কা আমি ঢাকায় থাকি। আর কোনোদিন খুলনায় (গ্রামের বাড়ি) যাইনি। আব্বা-মাকেও দেখিনি। ১৫ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়। কমলাপুর আর বিমানবন্দর রেলস্টেশন বস্তিতে থাকছি সব সময়।’
আশুরা বেগম বলেন, ‘ভিক্ষা করি আর কাগজ কুড়াইয়ে মেয়েদের খেতি (খেতে) দেই। আমার বর আরেকটা নিকা করছে। এখন ওই ছেড়িরে (দ্বিতীয় স্ত্রী) নিয়া থাইক্কে, আমোগো দেখে না। খানিক সময় আসে দুই মেয়েকে দেখতি। দেখে চলে যায়। রাস্তায় রাস্তায় থাকি। চিন্তা করি হুদু (শুধু) দুই মেয়ের জন্য।’
খাদিজার মা বলেন, ‘খানিক সময় মনে করি আব্বার বাড়ি চলি যাই। যাই না, চিনব না তাই। আমাগোর গ্রামের এক চাচির সঙ্গে আইছিলাম ঢাকায়। পরে তারে হারাইয়া ফেলছি। রাস্তায় খুব মশা কামড়ায়। কষ্ট হয়। মেয়েরা কান্না করে।’
কথা শেষে দেখা যায়, মা আশুরা একটি কাগজের ‘বিছানা’ পাতলেন। বালিশ নেই, একটি কাঁথা ছিল তাদের সঙ্গে। একটু পরেই ওই কাঁথার ভেতরে মাসহ দুই মেয়ে শুয়ে পড়ল ঘুমানোর জন্য।
রাত ১১টা ১৫ মিনিট। তখন দেখা যায়, ঘুমের ভেতরে কাঁথা থেকে বের হয়ে গেছে খোজেদা। খাদিজা মুখ বের করে ঘুমিয়ে আছে। আর মা আশুরা কাঁথার ভেতরে ঘুমিয়ে আছেন।