লিবিয়ায় মানবপাচারের ঘটনায় মাদারীপুরে ৩ মামলা, গ্রেপ্তার ২
লিবিয়ায় মানবপাচারের ঘটনায় মাদারীপুরে তিনটি মামলা করেছে তিন নিহতের পরিবার। তিন মামলায় ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই ঘটনায় এক নারীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি লিবিয়ায় গুলি করে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ জন অভিবাসীকে হত্যা করে মানবপাচারকারীরা। এদের মধ্যে বেশির ভাগই মাদারীপুরের বাসিন্দা। এই ঘটনায় মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাসিন্দা ও লিবিয়ায় নিহত জুয়েলের বাবা রাজ্জাক হাওলাদার বাদী হয়ে দালাল জুলহাস সরদারসহ চারজনের নামে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেছেন রাজৈর থানায়।
এ ছাড়া রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের নিহত রহিম খালাসীর ভাই আবু সাইদ খালাসী বাদী হয়ে রাজৈর থানায় আরো একটি মামলা করেছেন। এই মামলা দালাল জুলহাস সরদারসহ সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে একই ঘটনায় লিবিয়ায় নিহত ও মানবপাচারের শিকার মাদারীপুর সদর উপজেলার দুধখালি ইউনিয়নের মো. শামিমের বাবা আবদুল হালিম মিয়া বাদী হয়ে গতকাল রোববার সদর থানায় একটি মামলা করেন। এই মামলায় দালাল নজরুল ইসলামসহ তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
এই ঘটনায় গতকাল রাতেই মামলার আসামি দিনা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে। দিনা বেগম মানবপাচার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এবং দালাল নজরুল ইসলামের স্ত্রী।
রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নিহত জুয়েল হাওলাদারের বাবা রাজ্জাক হাওলাদার ও মা রহিমা বেগম বলেন, ‘আমাদের ছেলেসহ রাজৈরের বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজনকে দালাল চক্র লিবিয়া নেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে চার-পাঁচ লাখ টাকা চুক্তি করে নিয়ে যায় তিন-চার মাস আগে। তারপর লিবিয়ার ত্রিপোলি না নিয়ে বেনগাজীতে আটকে রেখে নির্যাতন শুরু করে। এরপর ভয়েজ রেকর্ডে নির্যাতনের শব্দ পাঠিয়ে আরো ১০ লাখ টাকা দাবি করে। আমরা হোসেনপুরে জুলহাস সরদার নামের ওই দালালের বাড়িতে গিয়ে ১০ লাখ টাকা দিয়ে আসি। লিবিয়ায় গুলি করে অনেক বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছেলেকেও পাচারকারীরা হত্যা করেছে।’
একই গ্রামের নিখোঁজ মানিক হাওলাদারের বাবা শাহ আলম হাওলাদার বলেন, ‘আমার ছেলে মানিককে লিবিয়া নেওয়ার কথা বলে দালাল জুলহাস আমার কাছ থেকে প্রথমে চার লাখ টাকা নিয়েছে। পরে ছেলেকে বেনগাজী আটকে রেখে ভয়েস রেকর্ডের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। আমি আমার ছেলেকে আনতে জুলহাসের বাড়ি গিয়ে টাকা দিয়ে আসি।’
রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত জাহান বলেন, ‘মানবপাচারের ঘটনায় রাজৈর থানায় দুটি মামলা দায়ের করেছে নিহতের পরিবার। দালাল জুলহাস দুটি মামলারই আসামি। একটি মামলায় সাতজন ও অপর মামলায় চারজনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে জুলহাস করোনা পজিটিভ হওয়ায় পুলিশি হেফাজতে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি রয়েছে।’
মাদারীপুর সদর থানার ওসি কামরুল ইসলাম মিয়া জানান, মানবপাচারের ঘটনায় সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় দিনা বেগম নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।