রিজেন্ট হাসপাতাল নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চার নির্দেশনা
প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের পরীক্ষা ও রিপোর্ট জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতালের বিষয়ে চারটি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হাসপাতালটির করা করোনা রিপোর্ট নিয়ে গোটা দেশে হই চই চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নির্দেশনায় জরুরি ভিত্তিতে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে করা সমঝোতা চুক্তি বাতিল করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব উম্মে হাবিবা স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনাপত্রে আরো বলা হয়েছে, লাইসেন্সের মেয়াদ নবায়ন ব্যতীত কীভাবে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের সনদ প্রদান করা হয়েছে তার যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে হবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে।
সমঝোতা চুক্তি ভঙ্গ করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ ও ভুয়া রিপোর্ট প্রদানের বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। অবিলম্বে রিজেন্ট হাসপাতালটির সব কার্যক্রম বাতিল ও সিলগালা করতে হবে।
এদিকে রোগীদের করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পরই বের হয়ে আসতে থাকে হাসপাতালটি মালিক সাহেদ করিমের অপকর্মের ফিরিস্তি।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) জানিয়েছে, কখনো সেনাবাহিনীর অফিসার, কখনো গোয়েন্দা, আবার কখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সংশ্লিষ্ট বলে পরিচয় দিয়ে বেড়াতেন সাহেদ। নিজেকে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব জাহির করে অর্থের বিনিময়ে টকশোতে অংশ নেওয়াও শুরু করেছিলেন তিনি। মূলত প্রতারণা আর ভেলকিবাজিতে সিদ্ধহস্ত তিনি। এমনকি দেশের ভিভিআইপিদের সঙ্গে ছবি তুলে নিজেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে পরিচয় দিতেও কার্পণ্য করতেন না।
রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদের নামেও আছে বৈচিত্র্য। জাতীয় পরিচয়পত্রে তাঁর নাম সাহেদ করিম থাকলেও একটি মামলায় জেল খেটে বেরিয়েই হয়ে যান মো. সাহেদ। আগে কারো কাছে তিনি ছিলেন মেজর ইফতেখার করিম। কারো কাছে পরিচয় দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ শহীদ নামে।
আবার সুযোগ বুঝে কোথাও মেজর, কর্নেল পদবিও ব্যবহার করতেন। এমনকি তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কর্মকর্তা হিসেবেও পরিচয় দিতেন। আবার রাতারাতি হয়ে ওঠেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বও।
প্রতারণার দায়ে রিজেন্ট হাসপাতাল ও প্রধান কার্যালয় ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সাহেদসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে করা হয়েছে নিয়মিত মামলাও। র্যাব কর্মকর্তা সারোয়ার বিন কাশেম গণমাধ্যমকে জানান, রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর তারা বেশ কয়েকদিন ধরে গোয়েন্দা নজরদারি করেন। এরপর সেখানে অভিযান চালানো হয়। এই সাহেদের উত্থানও অনেকটা নাটকীয়ভাবে হয়েছে।
এদিকে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক সুজয় সরকার আজ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, রিজেন্ট হাসপাতালের অনিয়ম ও প্রতারণার ঘটনায় আজ সকালে রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে সাহেদের অন্যতম সহযোগী তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক শিবলীকে র্যাব অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে। তারেক শিবলীর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানান সুজয় সরকার।