রংপুরের বদরগঞ্জে মসজিদের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য টিআর প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুয়া মসজিদ কমিটি ও জাল সিল তৈরি করে সরকারি অর্থ উত্তোলন করে, তা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগির চেষ্টা চালান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তিন সদস্য।

মসজিদ কমমিটির সভাপতি এ বিষয়ে গতকাল বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বদরগঞ্জ উপজেলার ৬ নম্বর রাধানগর ইউনিয়নের দিলালপুর বিন্ধিরধর জামে মসজিদে ২০২০-২১ অর্থবছরে টেস্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৬ হাজার ২৫০ টাকা উন্নয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দের কথা মসজিদ কমিটির কাউকে না জানিয়ে সেই টাকা আত্মসাতের চেষ্টা চালান স্থানীয় তিন ইউপি সদস্য।

অভিযুক্ত ইউপি সদস্যরা হলেন আজহার আলী (২নং ওয়ার্ড), শামছুল হক (৩নং ওয়ার্ড), শচীন চন্দ্র (১নং ওয়ার্ড)। 

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, বরাদ্দের বিষয়টি মসজিদ কমিটি জানতে পারলে তখন মসজিদে ২০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন ইউপি সদস্য। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৩০০ টাকা উত্তোলনের প্রায় চার মাস পর ইউপি সদস্য আজহার আলী মসজিদ কমিটির সভাপতি আলহাজ মোস্তাফিজুরকে দেন। মসজিদ কমিটির সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সভাপতি মোস্তাফিজুর সেই টাকায় হাত দেবেন না বলে জানিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। তখন মোস্তাফিজুরের বাঁশের আটালে (টং) আজহার আলী টাকা ফেলে যান। পরে ফেলে যাওয়া সেই টাকা ইমরান নামে আজহারের এক অনুসারি মসজিদে গিয়ে রেখে আসেন। সেই টাকা কিছুদিন ধরে মসজিদেই ছিল। তবে গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে ইউপি সদস্য আজহার পিআইও অফিসের আবু সাঈদ ও মশিয়ারকে সঙ্গে নিয়ে মুয়াজ্জিন আ. হামিদকে সেই টাকা মসজিদ থেকে বের করে দিতে বলেন। মসজিদ কমিটির অনুমতি ব্যতিত টাকা বের করতে রাজি না হওয়ায় আজহার মুয়াজ্জিনকে হুমকি-ধমকি দেন। পরে ভয়ে মুয়াজ্জিন টাকা বের করে দেন। সরকারি বরাদ্দের সেই টাকা ফেরত নিয়ে বর্তমানে পিআইও অফিসে জমা রাখা হয়েছে।

অভিযোগকারী মসজিদ কমিটির সভাপতি আলহাজ মোস্তাফিজুর বলেন, ‘অনেক ধরাধরি করে ২০ হাজার টাকা দিতে চান মেম্বার। ওরা তিন মেম্বার মিলে বাকি টাকা নাকি ভাগ করে নেবে। মসজিদে ১৭ হাজার ৩০০ টাকা দিছিল। তাও আমাদের কাউকে না জানিয়ে নিয়ে গেছে।’

মসজিদের মুসল্লি আব্দুল জলিল জানান, আজহার মেম্বারকে টাকার কথা বলায় ওনি মসজিদেই অশ্লীল ভাষায় সাবেক সম্পাদককে গালিগালাজ করেছেন। আরও বলেন, ‘এই ২০ হাজার টাকাও না দিলে আপনারা কী করতে পারবেন?’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আজহার আলী বলেন, ‘ওরা সবাই মিথ্যা বলছে। সামনে আমার নির্বাচন, তাই তারা এমন মিথ্যা ছড়াচ্ছে। আমি প্রয়োজনে ওদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করব।’

এ বিষয়ে বদরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শ্রী বাবুল চন্দ্র রায়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘দিলালপুর বিন্দিরধার জামে মসজিদে ২০২০-২১ অর্থবছরে টেস্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৬ হাজার ২৫০ টাকা উন্নয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে কেউ যদি এই টাকা আত্মসাৎ করে, তাহলে মসজিদ কমিটির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।’

মুঠোফোনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রেহেনুমা তারান্নুম বলেন, ‘বিষয়টি অবগত আছি। তদন্ত সাপেক্ষে খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’