‘ম্যানেজ’ করেই উপকূলে মাছ ধরছেন জেলেরা!
পটুয়াখালীর উপকূলজুড়ে চলছে নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে অসময়ে সাগর ও নদীতে মাছ ধরার হিড়িকে সরকারের ইলিশ প্রজনন মৌসুমে ইলিশের বংশবিস্তার অভিযান কতটা সফল হবে, তা নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও মৎস্য অফিসের লোকদের ম্যানেজ করেই সাগরে মাছ শিকার করছেন বলে জানান জেলেরা।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা উপজেলার হোসেনপাড়া এলাকার জেলে আবু বকর সিদ্দিক খুটা জাল দিয়ে সাগরে মাছ শিকার করেন। সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মহাজনের তাগাদা আর ধারের টাকা পরিশোধের জন্য এ কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সাগরে মাছ ধরতে চাঁদা দিতে হচ্ছে বলে জানান জেলেরা। শুধু আবু বকরই নন, কুয়াকাটার ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতে অন্তত দুই শতাধিক ছোট-বড় ট্রলার সাগরে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে মাছ শিকার করছে। একটি ব্যবসায়ী চক্র জেলেদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে চাঁদা আদায় করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নির্বিঘ্নে প্রজনন নিশ্চিত করা এবং ছোট মাছকে বড় হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে গত ২০ মে থেকে ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য বিভাগ। এ নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে ২৪ জুলাই। এই সময়ে সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সরকারের মৎস্য বিভাগ সংশ্লিষ্ট এলাকায় গণসচেতনতার জন্য ব্যাপক মাইকিং ও নানামুখী প্রচারণা চালায়। কিন্তু কে শোনে কার কথা? নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ছোট-বড় ট্রলার নিয়ে অবাধে মাছ ধরছেন জেলেরা।
বরফকলগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পটুয়াখালীর মৎস্যবন্দর মহিপুর ও আলীপুরের অধিকাংশ বরফকল চালু রয়েছে। এসব কল থেকে বরফ নিয়ে ট্রলারগুলো রওনা দিচ্ছে গভীর সাগরে।
সম্প্রতি কুয়াকাটা, গঙ্গামতী, কাউয়ার চর, লেম্বুর চরে গিয়ে দেখা যায়, সাগর থেকে মাছ শিকার শেষে ফিরছেন কেউ। আবার কেউ যাচ্ছেন মাছ শিকারে। ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট নৌকা নিয়ে কমপক্ষে অর্ধশত খুটা জেলেনৌকা সৈকতের অদূরে মাছ শিকার করছে। বড় ট্রলারও গভীর সাগরে মাছ শিকার করে উপকূলে ফিরেছে।
সাগরে অবাধে মাছ শিকারে ব্যস্ত এসব জেলের নিরাপত্তা দেওয়ার নামে একটি চক্র সক্রিয়। জেলেদের কাছ থেকে ট্রলারের আকার-প্রকৃতি অনুযায়ী ট্রলারপ্রতি দুই হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এমনিতেই করোনার কারণে জেলেরা অন্য পেশায় যেতে পারছে না। ঘূর্ণিঝড় আম্পানও তাঁদের ক্ষতি করে গেছে। ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধের সময় বিশেষ খাদ্যসহায়তা এখনো তাঁরা অনেকেই পাননি। অভাব-অনটনে পড়েই তাঁরা সাগরে গিয়ে জাল ফেলছেন।
কুয়াকাটার জেলে হোসেন ফকির বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের সাগরে মাছ শিকারে অনীহা রয়েছে। এমনিতেই সাগরে এখন মাছ কম ধরা পড়ছে। তার ওপর সরকারি নজরদারি। কিন্তু মহাজনরা তাঁদের বরফ বিক্রি এবং মাছ কিনে দাদনের টাকা পরিশোধ করে নেওয়ার জন্য জেলেদের সাগরে মাছ ধরতে উদ্বুদ্ধ করছে।’
উপকূলীয় উপজেলা রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ ও মৌডুবীর নিজকাটা এলাকা থেকে কমপক্ষে ৫০টি ট্রলার প্রতিদিন সাগরে মাছ ধরছে। পুলিশ ও মৎস্য অফিসকে ম্যানেজ করে দেদার ইলিশ শিকার করার অভিযোগ উঠেছে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে মহিপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফজলু গাজী দাবি করেন, ‘সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা মেনেই তাঁরা মাছ শিকার ও ব্যবসা পরিচালনা করেন। জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে মাছ শিকারের সুযোগ দেওয়ার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। জেলেদের কাছ থেকে যাতে কেউ এ ধরনের টাকাপয়সা নিতে না পারে, সে জন্য ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সাগরে অবৈধ মাছ শিকারের বিষয়টি আমরাও শুনেছি। আমাদের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’