মৃত বাবার মুখও দেখতে পারেননি ‘প্রতারক’ সাহেদ
করোনাভাইসারের (কোভিড-১৯) পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণা করা রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ তার বাবাকে শেষ দেখা দেখতে পারেননি। সাহেদের বাবা সিরাজুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
গতকাল সকাল থেকেই সিরাজুল ইসলামের শরীরের অবস্থার অবনতি হতে শুরু করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাহেদসহ তার পরিবারের কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ঠিক সেসময় সিরাজুলের দুইবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। ফলে রোগী যেকোনো সময় মারা যেতে পারেন এই ভেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তেজগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিরাজুল যখন মারা যান তখন হাসপাতালে তাঁর পরিবারের কেউ ছিলেন না।
এরপর থেকে পরিবারের লোকজনকে খুঁজতে শুরু করেন ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশিস কুমার। তিনি জানতে পারেন সাহেদের স্ত্রী সাদিয়া বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে কর্মরত। বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে সাদিয়াকে তাঁর শ্বশুরের মৃত্যুর খবরটি জানানো হয়। এরপর সাদিয়ার চাচাশ্বশুর হাসপাতালে যোগাযোগ করেন। তার কিছুক্ষণ পর মো. সাহেদের গাড়িচালক হাসপাতালে গিয়ে সিরাজুল ইসলামের লাশ গ্রহণ করেন।
ডা. আশিস কুমার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত ৪ জুলাই সাহেদ তার বাবাকে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি করেন। ভর্তির সময় আমি শাহেদকে বলেছিলাম, তার নিজের হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য। কারণ সাহেদের হাসপাতাল করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত। কিন্তু সাহেদ আমাকে বলেছিলেন তার হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সব সাপোর্ট নেই।’
‘হাসপাতালে নিয়ে আসার পর সাহেদ বলেছিলেন, তার বাবার নমুনা পরীক্ষায় পরপর তিনবার করোনা নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু পরের দিন নমুনা পরীক্ষা করলে রিপোর্ট পুনরায় পজিটিভ আসে। সর্বশেষ তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কিন্তু সাহেদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করতে পারেনি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজুলের লাশ নিয়ে যায় সাহেদের গাড়িচালক।’
রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের স্ত্রী সাদিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে আমার শ্বশুরকে হাসপাতাল থেকে আনার পর রাতেই দাফনের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী রাতেই আজিমপুর কবরস্থানে লাশ নেওয়া হয়। কিন্তু রাত অনেক হওয়াতে কবরস্থান কর্তৃপক্ষ লাশ দাফন করতে দেয়নি। লাশ ওখানেই রাতভর রাখা ছিল। আজ শুক্রবার সকাল ৭টার সময় লাশ দাফন করা হয় ওখানে।’
সাহেদের স্ত্রী সাদিয়া বলছিলেন, ‘শ্বশুর মারা গেল কিন্তু তাঁর ছেলে এই খবরটি পরিবারের কাছ থেকে শুনতে পেল না। হয়তো টিভি বা পত্রিকাতে দেখেছে। আরো প্যাথেটিক ব্যাপার হচ্ছে, বাবার লাশটাও শেষবারের মতো দেখতে পারল না সাহেদ। তার সঙ্গে আমাদের কারো কোনো যোগাযোগ নেই। কোথায় আছে তাও জানি না। ফোনও বন্ধ। তবে মানুষজন এসব নিয়ে নানা কথা বলছে। লজ্জা লাগছে, সঙ্গে খারাপও লাগছে। অথচ, কয়েকদিন আগেও আমরা সবাই সাহেদকে নিয়ে গর্ববোধ করতাম। সবাই বলতেন, সাহেদ করোনার মতো মানবিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এসব খারাপ কাজের কথা আমরা কেউ জানতাম না।’
গত সোমবার বিকেল থেকে রাত অবধি উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালটির মূল কার্যালয় ও হাসপাতালটির মিরপুর শাখায় অভিযান পরিচালনা করেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান শেষে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই ইচ্ছেমতো ‘নেগেটিভ-পজিটিভ’ ফল বসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মোট আটজনকে আটক করে র্যাব। পরেরদিন মূল শাখা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয় র্যাব। ওইদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে রিজেন্ট হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করতে নির্দেশনা জারি করা হয়। ওই রাতেই রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদসহ মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা দায়ের করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১)। এদিকে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সাহেদকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।