মিলাররা চাল না দিলে কঠোর পদক্ষেপ নেবে সরকার : খাদ্যমন্ত্রী
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ‘সরকারি গুদামে চাল না দিলে চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে সরকার। পরিস্থিতি বিবেচনায় ভারতীয় ক্রয় নীতিমালা অনুসরণ ও খাদ্যপণ্য মজুত আইনে পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা করছে সরকার।’
আজ বুধবার বিকেলে নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা এবং ধান-চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সরকারিভাবে চালের মজুত ঠিক রাখতে এরই মধ্যে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘গত ৭ নভেম্বর থেকে ধান এবং ১৫ নভেম্বর থেকে চাল সরকারিভাবে ক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এখনও কোনো মিলমালিক সরকারি গুদামে চাল দেওয়ার জন্য চুক্তি করেননি। এরইমধ্যে দেড় লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য টেন্ডার সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও চাল আমদানি করা হবে। তবে চাল আমদানির ফলে কৃষকেরা ক্ষতির শিকার হন এমন পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।’
খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কৃষকদের লাভ-ক্ষতির কথা চিন্তা করে চাল আমদানি যাতে বেশি না হয়, সেজন্য সরকার বেসরকারিভাবে চাল আমদানিতে নিরুৎসাহিত করছে। এজন্য সরকার নিজেই এবার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টেন্ডার আহ্বান করে ঠিকাদারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল আমদানি করা হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের ক্রয় নীতিমালা অনুসরণ করে মিলারদের পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতা অনুযায়ী সরকারকে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল দিতে বাধ্য করা হবে। এছাড়া মিলে ধান-চাল মজুত আইনেও পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বর্তমানে একটি মিলে পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার পাঁচগুণ ধান-চাল মজুত রাখার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এখন থেকে একটি মিল তিনগুণ ধান-চাল মজুত রাখতে পারবেন। এ ধরণের আইন করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’
কৃষকদের ধানের ন্যায্যমূল্য দিতে সরকার বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতেই দর বেঁধে দেওয়া এবং সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহের পরিমাণ বৃদ্ধি করায় সুফল পাচ্ছে কৃষকেরা। বিগত কয়েক বছর ধরেই কৃষকেরা কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় যুগপোযোগী এবং সময়মতো উদ্যোগ নেওয়ায় কৃষকেরা এখন কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে।’
সভায় মিল মালিকদের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে চাল ক্রয়ের মূল্য ৩৭ টাকা বাড়িয়ে ৪০/৪২ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো দাবি করা হয়। সেইসঙ্গে আমন চাল ক্রয়ে খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ২৬ নভেম্বর থেকে বাড়িয়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর কথা বলা হয়।
চাল ব্যবসায়ীরা বলেন, ধানের বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী বর্তমানে এক কেজি চাল আমদানি করতে ৪২ টাকার উপরে উৎপাদন খরচ পড়ছে। সেই জায়গায় সরকারকে ৩৭ টাকা দরে চাল দিতে গিয়ে পরিবহন খরচসহ মিলমালিকদের পাঁচ থেকে সাত টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানম, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ, নওগাঁ জেলা ধান-চাউল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন, বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক কেএম লায়েক আলী, নওগাঁ জেলা চাল মালিক গ্রুপের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদারসহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের খাদ্য বিভাগীয় কর্মকর্তা ও ধান-চাল ব্যবসায়ীরা।