মার্কিন নাগরিক হত্যা: সহকারী পুলিশ কমিশনারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক সাফায়েত মাহবুব ফারাইজিকে হত্যার অভিযোগে বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এএসপি) তয়াছের জাহানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে করা মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিব এই আদেশ দেন। এ দিন আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি করেন ফারাইজির মা শামিমুন নাহার।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন এনটিভি অনলাইনকে এ বিষয়ে তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ মামলার অপর আসামিরা হলেন- ভাটারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর, হত্যাকাণ্ডের শিকার সাফায়েতের বান্ধবী সুজানা তাবাসসুম সালাম, আফতাব, শাখাওয়াত, আসওয়াদ, বাড়ির মালিক কামরুল হক ও কেয়ারটেকার রিপন।’
আইনজীবী সরোয়ার আরও বলেন, ‘বিচারক আজ বাদীর জবানবন্দি শুনে বিকেলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আগামী ৯ মার্চ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্মদিন পালনের জন্য নিহত সাফায়েত মাহাবুব ফারাইজী বাংলাদেশে আসেন। এরপর সাফায়েত তাঁর মা শামীমুন নাহার লিপির সঙ্গে সুজানা তাবাসসুম সালাম, মো. আফতাব, মো. শাখাওয়াত ও আসওয়াদকে বন্ধু বলে পরিচয় করে দেন।
মাঝে মধ্যে সাফায়েতের বাসায় দেখা করতে আসতেন সুজানা। পরে সাফায়েতের মা শামীমুন নাহার জানতে পারেন, তাঁরা সবাই তাঁর বাসায় এসে নেশা করেন এবং সাফায়েতকেও নেশা করতে বলতেন। এরপর সুজানা তাবাসসুমকে সাফায়েতের সঙ্গে দেখা ও বাসায় আসতে নিষেধ করেন তিনি।
বাসায় আসা-যাওয়ায় নিষেধ করায় ক্ষেপের গিয়ে ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর সুজানা, আফতাব, শাখাওয়াত ও আসওয়াদ যোগসাজশে সাফায়াতের মাকে গালিগালাজ ও আঘাত করেন। তিনি তখন ৯৯৯-এ কল করেন। পরে রামপুরা থানা থেকে পুলিশ গিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে।
মামলার বিবরণ থেকে আরও জানা যায়, মাকে গালিগালাজ ও আঘাতের ঘটনার পর সাফায়েত তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
পরে ১০ ডিসেম্বর তিনি তাঁর মায়ের সঙ্গে গুলশানে কাজে যান। সেখান থেকে বাসায় ফেরার পথে সুজানাসহ বিবাদীরা তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে সাফায়েত ও তাঁর মা আহত হন। পরে তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে সাধারণ ডায়েরি করার জন্য গুলশান থানায় যান। কিন্তু থানা তাদের সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করেনি।
ঘটনার দিন বিবাদীরা সাফায়েতের বাড়িতে গিয়ে সুজানার সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক রাখতে বলেন। না হলে সাফায়েত দেশে থাকতে পারবে না বলে হুমকি দেন।
আরও জানা যায়, গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর সাফায়েত বড়দিনের অনুষ্ঠান পালন করতে বের হন এবং রাত পৌনে ১২ টায় ফিরে আসেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে সুজানা তাবাসসুম, আফতাব, শাখাওয়াত ও আসওয়াদকে দেখে সাফায়েতের মা রেগে যান।
মায়ের বকুনিতে তাঁদের সঙ্গেই বেরিয়ে যান সাফায়েত। পরে আর বাসায় ফিরে আসেননি।
এরপর ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬ টার দিকে সাফায়েতের মরদেহ উদ্ধার করে ভাটারা থানার পুলিশ।
এ ঘটনায় বাদী হয়ে আজ আদালতে মামলা করেন সাফায়েতের মা শামীমুন নাহার। মামলায় ছয়জনকে সাক্ষী করা হয়। পরে শামীমন নাহারের জবানবন্দি শুনে পিবিআইকে আগামী ৯ মার্চ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
মামলা করতে দেরি হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিহত সাফায়েতের মা শামীমুন নাহার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘থানায় মামলা করতে গেলে তাঁরা তা নিতে অস্বীকার করেন। এদিকে সাফায়েত হত্যার পর থেকে নানা হুমকিধামকি অব্যাহত ছিল। সব বিষয়ে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে আদালতে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’