ভৈরবে বিআইডব্লিউটির ইজারা নিয়ে উত্তেজনা
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পুরাতন মেঘনা ফেরিঘাট এলাকায় বিআইডব্লিউটি এর ইজারা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ইজারাদারদের লোকজনের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রত্যেকেই নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে শোডাউন করছে প্রতিদিন। ফলে যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, ভৈরব পুরাতন মেঘনা ফেরিঘাটে প্রতি বছর চারটি প্রতিষ্ঠান চারভাগে ইজারার ডাক দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ফেরিঘাটের রেলওয়ে মুরিংঘাট, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বন্দর জেটিকে কেন্দ্র করে ৫০ গজ পর্যন্ত, কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে মৎস্য আড়ৎঘাট এবং ভৈরব-আশুগঞ্জ খেয়াঘাটের ইজারা দেয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিস।
এবারের অর্থ বছরে রেলওয়ে মুরিংঘাটের ইজারা পায় উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. আরমান উল্লাহ। বিআইডব্লিউটিএর জেটি এলাকার ইজারা পায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেফাত উল্লাহ, খেয়া পারাপারের ইজারা পায় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমানসহ আশুগঞ্জের অপর একজন ইজারাদার, জেলা পরিষদের ডাক পায় কয়লা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মজনু সওদাগর হাসান।
কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ নতুন ডাকে তাদের সীমানা ৫০ গজ থেকে বৃদ্ধি করে ৫০০ গজ করায় ইজারাদারদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছে। সেই বিরোধ বর্তমানে উত্তেজনায় রূপ নিয়েছে। যা সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি করেছে। সেই উত্তেজনার কারণে বর্তমানে কোনো পক্ষই ওই এলাকায় টোল আদায় করতে যেতে পারছেন না। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রত্যেকেই।
এই পরিস্থিতিতে ইজারাদাররা বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী, ভৈরব উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ভৈরব পৌর মেয়র, ভৈরব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অভিযোগপত্রে তারা জানান, গত ১৪ জুলাই বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ভৈরব ফেরিঘাট এলাকার বন্দর জেটি এলাকা ডাক দেয়। প্রতি বছর ৫০ গজ জায়গার মধ্যে ইজারার ডাক দিলেও এ বছর ৫০ গজকে ৫০০ গজে বৃদ্ধি করে নতুন ডাক দেওয়া হয়। কিন্তু সীমানা বৃদ্ধির কোনো নোটিশ বা চিঠি সংশ্লিষ্ট ইজারাদারদের দেওয়া হয়নি।
নতুন ডাকের ইজারা পান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শেফাত উল্লাহ। তিনি ইজারা পেয়ে তাঁর এলাকা বুঝে নিতে গেলে রেলওয়ের মুরিংঘাট এলাকার ইজারাদার, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আরমান উল্লাহসহ অন্য ইজারাদের সঙ্গে সীমানা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এই জটিলতা একসময় উত্তেজনায় রূপ নেয়। যা বর্তমানে চরম আকার ধারণ করেছে।
এ বিষয়ে ইজারাদার মো. আরমান উল্লাহ বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ বেআইনিভাবে ৫০ গজের স্থলে ৫০০ গজ জায়গা নিলাম দিয়েছে। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মুরিংঘাটের ডাকে সীমানা দিয়েছেন মেঘনা ফেরিঘাটের পুরো এলাকা। যার বৈধ ইজারাদার আমি। বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে এমনিতেই লোকসানের মুখে পড়েছি। তার ওপর যদি সীমানা কমে যায়, তবে তো মরার ওপর খাড়ার ঘায়ের মতো অবস্থা হবে আমার।’
ইজারাদার মো. শেফাত উল্লাহ বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক আমি টেন্ডারের মাধ্যমে টোল আদায়ের ডাক পেয়েছি। তবে ৫০ গজ হলে আমি বেশি টাকা ব্যয় করে এ ডাক দিতাম না। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ যে জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, আমি সেখান থেকেই টোল আদায় করব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার মেয়র আলহাজ ইফতেখার হোসেন বেনু বলেন, ‘ইজারা নিয়ে বর্তমান উত্তেজনা নিরসনে গত মঙ্গলবার সব পক্ষকে নিয়ে একটি সমঝোতা সভায় বসেছিলাম। সেখানে জেলা পরিষদের প্যানেল মেয়র, বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা মো. সুলায়মান সাহেবও উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সবার বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে নিয়ে তালগোল পাকিয়েছেন। আমরা সাংসদ আলহাজ নাজমুল হাসান পাপনের মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টির সুরাহা করতে আহ্বান জানাবো।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুবনা ফারজানা বলেন, ‘মেঘনা ফেরিঘাটে চারটি প্রতিষ্ঠানের ইজারার ডাক রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ ৫০ গজ জায়গার সীমানাকে ৫০০ গজ করায় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য ইজারাদাররা এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছে। আন্তমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া বিআইডব্লিউটিএ ভৈরবে সীমানা বৃদ্ধি করে ডাক দিতে পারে না। এ বিষয়ে সব ইজারাদারদের একত্রিত করে আগামী সোমবার মীমাংসার ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ-ভৈরববাজার নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘নদী ও বন্দর এলাকার বৈধ কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ। এখানকার টোল আদায়ের সীমানা নিয়ে প্রধান কার্যালয় থেকে একাধিক জরিপ হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, এখানে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে জেটি করা হয়েছে। টোল আদায়ের সীমানা এতো কম হবে কেনো? এছাড়া সারাদেশে নদীর মালিকানা বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। এইসব দিক বিবেচনা করে সীমানা বৃদ্ধি করেছেন কর্তৃপক্ষ।’
সীমানা বৃদ্ধির বিষয়ে তাঁর কার্যালয়ের কোনো ভূমিকা নেই দাবি করে মো. শহীদুল্লাহ আরও বলেন, ‘কেউ কেউ আমাকে অন্যায়ভাবে দোষারোপ করছেন। অথচ ইজারার সমস্ত কিছুর প্রক্রিয়া বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয় থেকে সম্পন্ন হয়।’