ভৈরবে কাঁটাতারের বেড়ায় অবরুদ্ধ হওয়ার শঙ্কায় বস্তিবাসীর মানববন্ধন
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রেললাইনের পাশ দিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে অবরুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ওই এলাকার কয়েকশ বস্তিবাসী নারী, পুরুষ ও তাদের শিশু সন্তানরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ভৈরবের নিউটাউন রোড সংলগ্ন বস্তি এলাকার রেললাইনের পাশে ওইসব কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
ওইসব কর্মসূচি থেকে তাঁরা দাবি করেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাঁদের যাওয়া-আসার বিষয়টি নিয়ে না ভেবেই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ শুরু করে দিয়েছে। এটি নির্মাণ করা হলে তাঁরা পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন। তাঁদের বস্তি থেকে বের হওয়া ও চলাচল সম্পূর্ণই বন্ধ হয়ে যাবে।
তাঁরা বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভূমিহীন ও অসহায় লোকজন এখানে বসবাস শুরু করে। এখানে অনেকেই আছেন, যাদের জন্ম, বিয়ে-সাদি এই বস্তিতেই হয়েছে। তাঁরা নিতান্তই খেটে খাওয়া মানুষ। টাকা দিয়ে ভাড়া বাসায় থাকার মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই।
তাঁরা অভিযোগ করেন, ভিনদেশের রোহিঙ্গারা যদি এই দেশে থাকার অধিকার পায়, তবে তারা কেনো নিজ দেশের এই বস্তিতে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারবেন না? তাঁরা তাঁদের চলাচলের পথ খোলা রেখে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
এ সময় অনেকেই বাসস্থান হারানোর ভয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জোসনা বেগম, গোলাপ মিয়া, নাছিমা বেগম, হানিফ মিয়া, আক্কাছ আলী প্রমুখ।
এদিকে মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে বস্তির শিশুদের জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে পরিচালিত ‘সবার স্কুলের’ উদ্যোক্তা মোজাম্মেল হক মাহিন জানান, ১৪ মাস ধরে তাদের পরিচালিত সবার স্কুলে ৩০ জন শিক্ষার্থী শিক্ষাগ্রহণ করছিল। এই কাঁটাতারের বেড়ার কারণে আসা-যাওয়া করতে না পারলে ওইসব শিশুর শিক্ষার পথ অবরুদ্ধ হবে। তিনিও বস্তিবাসীর যাতায়াতের পথ রেখে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের আহ্বান জানান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতি।
পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে তাঁদের দাবি তুলে ধরে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। স্মারকলিপি গ্রহণ করে ইউএনও লুবনা ফারজানা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তাঁদের আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আরএকের ঠিকাদারের প্রতিনিধি মো. মিজানুর রহমান জানান, ভৈরবের রেলওয়ে স্টেশন থেকে পলাশ সিনেমা হল মোড় পর্যন্ত সাম্প্রতিক সময়ে চুরি, ছিনতাই, খুন ও মাদক চোরাচালান বেড়ে যাওয়ায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই এলাকার দুইপাশে প্রতিরক্ষা দেয়াল ও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করছে। যাত্রীসহ স্থানীয় মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার জন্যই এই পদক্ষেপ। আমরা কাজ পেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া কাজ বন্ধ রাখার কোনো উপায় নেই।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ভৈরব বাজারঘাটের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মিথুন কুমার দাস জানান, মানবিক দিকটি বিবেচনায় বিষয়টি নিয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।