ভিক্টর পরিবহনের বাসে চাঁদাবাজির অভিযোগ
রাজধানীর সদরঘাট থেকে কামারপাড়া পথে চলাচলকারী ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের বাসগুলোতে যুবলীগের কয়েকজন চাঁদা দাবি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল ইসলাম। চাঁদাবাজির প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার ১৩০টি বাস চলাচল সাত ঘণ্টা বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ।
পরে পুলিশ মামলা নেবে ও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করবে বলে আশ্বাস দিলে বাস চলাচল আবার শুরু হয়। তবে আজ শনিবারও মামলা নেয়নি পুলিশ। গ্রেপ্তার করেনি কাউকে।
চাঁদাবাজির ঘটনায় এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভিক্টর পরিবহনের চেয়ারম্যান কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডি নম্বর ১৬১৯। জিডিতে পরিবহনের চেয়ারম্যান মো. হোসাইন রফিকুল আলম (দিপু) উল্লেখ করেন, ভিক্টর ক্লাসিক বাস মালিক পরিবহন লিমিটেডের সভাপতি থাকাকালীন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ৩/১১/১৬ তারিখ থেকে ১৭/১২/২০১৮ তারিখ পর্যন্ত কমিটির অনুমোদন দেয়। যার প্রেক্ষাপটে বিআরটিএ থেকে ওই সময়ের নামে সদরঘাট থেকে বাইপাইল পর্যন্ত রুট পারমিট পেয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষে এবং কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় আমাদের সবার সম্মতিক্রমে ভিক্টর বাস মালিক পরিবহন লিমিটেডের নামে বিগত ১০/৭/২০১৯ তারিখে আমি মো. হোসাইন রফিকুল আলম (দিপু) চেয়ারম্যান, আশরাফুল ইসলাম আশরাফকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, গোলাম ফারুক মানিককে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, মামুন মিয়া ও আল আমিন বুলবুলকে পরিচালক করে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধক (আরজেএসসি) থেকে নিবন্ধন করাই, যার রেজিস্ট্রার নম্বর সি ১৫৩২৩২/২০১৯, দিয়ে আমরা সুষ্ঠুভাবে কোম্পানি পরিচালনা করে আসছি। কিন্তু আমাদের কোম্পানির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফারুক মানিক বিগত ২৫/০৯/২০২০ তারিখ থেকে কোম্পানির নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার লক্ষে শুভ, নিজাম, মনিরসহ কিছু যুবলীগ পরিচয়ধারী বেপরোয়া লোকজন আমাদের কোম্পানির গাড়িগুলো থেকে চাঁদা দাবি করেন। এবং কোম্পানির স্টিকারযুক্ত সব কাগজ ছিঁড়ে ফেলে দেয়। উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাড়া আমিসহ কোম্পানির সবাই উক্ত কাজে বাধা দিলে আমাদের কোম্পানি ভিক্টর ক্লাসিক বাস মালিক পরিবহন লিমিটেডের আমিসহ সব শেয়ারহোল্ডার কার্ডধারী সুপারভাইজার ও ড্রাইভারদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
ভিক্টর ক্লাসিক বাস মালিক পরিবহন লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হোসাইন রফিকুল আলম (দীপু) এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা সবাই পরিবহন মালিক শ্রমিক লীগের সঙ্গে যুক্ত। সবাই আওয়ামী পরিবারের লোক। তারপরও এখন আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।’
ভিক্টর পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত থাকা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাহীন এনটিভি অনলাইনকে জানান, ভিক্টর পরিবহন থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের মোয়াজ্জেম, মানিক, ফয়সাল ও মিজান স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু লোক নিয়ে ভিক্টর পরিবহনের বাসপ্রতি দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা দাবি করেন।
তার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার মালিক ও শ্রমিকরা মিলে পরিবহনটি সাত ঘণ্টা বন্ধ রাখে। পরে পুলিশ মামলা নেবে ও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করবে বলে আশ্বাস দিলে বাস চলাচল আবার শুরু হয়। তবে আজ শনিবারও মামলা নেয়নি পুলিশ। গ্রেপ্তার করেনি কাউকে।
যোগাযোগ করা হলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি একটি জিডির কপি পেয়েছি। সেটার তদন্ত চলছে। আর যদি কেউ মামলা করতে চায়, তাহলে অবশ্যই মামলা নেওয়া হবে।’
ভিক্টর ক্লাসিক বাস মালিক পরিবহন লিমিটেডের কোম্পানীর ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর গোলাম ফারুক মানিক চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এটা পুরোটাই ভুয়া। আশরাফ নিজেই একজন চাঁদাবাজ। আমি ৩০ বছর ধরে গাড়ির ব্যবসা করি। আমি চাঁদাবাজি করি না। গতকাল তিনি চাঁদাবাজি করতে গিয়েছিলেন। তখন তাঁকে দৌঁড়ানি দিয়েছি। তখন তিনি অফিসের সামনে বাস বন্ধ করে দেন।’