ভালোবাসার প্রতিদান দিতে ‘সর্বোচ্চ’ চেষ্টা করবেন রেজাউল
নগরবাসীর ভালোবাসার প্রতিদান দিতে নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। নৌকা মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ছয় গুণের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত মেয়র বলেছেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ১০০ দিনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু কর্মসূচির বাস্তবায়ন করবেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে বন্দরনগরীর বহদ্দারহাট বাড়ির প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিশ্রুতির পুনর্ব্যক্ত করেন রেজাউল করিম চৌধুরী। নির্বাচন পরবর্তী প্রথম সাক্ষাতে নিজের নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়েনের কথাও জানান তিনি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ হয়। রাতে বেসরকারি ফলাফলে রেজাউল করিম চৌধুরীকে মেয়র পদে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আজ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সেখানে মেয়র পদে মোট সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে রেজাউল করিম চৌধুরী নৌকা মার্কায় ভোট পড়েছে তিন লাখ ৭৯ হাজার ২৪৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ৫২ হাজার ২৪৮ ভোট। নির্বাচনে মোট ২২.৫২ ভাগ ভোট পড়েছে।
বিজয়ের পর আজ সকাল থেকেই রেজাউল করিম চৌধুরীর নিজের বাড়িতে ভিড় করতে থাকেন দলীয় নেতাকর্মী ও পাড়া-প্রতিবেশীরা। এ সময় তাঁরা ফুলের মালা দিয়ে বিজয়ী মেয়রকে বরণ করে নেন এবং সংবর্ধনা জানান। বিশেষ করে যেসব দলীয় নেতাকর্মী নির্বাচনে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন, তাঁদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান তিনি। পরে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে রেজাউল করিম তাঁকে নির্বাচিত করায় নগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। এটা বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এ বিজয় আমার নয়, এ বিজয় চট্টগ্রামবাসীর। এ বিজয় বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতীক নৌকার।’
সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চান জানিয়ে নতুন নগরপিতা বলেন, ‘নগরবাসীকে কথা দিতে পারি, প্রতিশ্রুতি পূরণে কঠোর পরিশ্রম করব। স্পষ্ট বলতে চাই, অন্যায় অনৈতিক কাজে কখনো ক্ষমতাকে ব্যবহার করব না। সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব।’
প্রথম ১০০ দিনে কিছু কর্মসূচি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে জানিয়ে রেজাউল করিম আরো বলেন, ‘জলাবদ্ধতা এই নগরীর প্রধান সমস্যা ও সংকট। জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), সিটি করপোরেশন, ওয়াসাসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ওয়াসা পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব প্রকল্পে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। এসব প্রকল্প ঠিকভাবে বাস্তবায়নে কাজ শুরু করব।’
নগরীর যানজট নিরসন ও ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা রোধে গণপরিবহনের তুলনায় ছোট গাড়ি বেড়ে যাওয়া, নগরীর ব্যস্ততম এলাকা ও সড়কের আশপাশে যত্রতত্র গড়ে ওঠা অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ভবনে আন্ডারপার্কিং ব্যবস্থা, বেদখল সড়ক উদ্ধার করে যান ও জনচলাচল উন্মুক্ত করা হবে বলেও জানান রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি আরো জানান, নগরীর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ট্রাফিক বিভাগ, যানবাহন মালিক ও বিআরটিএর মধ্যে সুনিদিষ্ট নীতিমালা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবেন।
নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া ৩৭ দফা কর্মসূচির অধিকাংশই আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে বলে মেয়র সাংবাদিকদের জানান।
এদিকে এবারের নির্বাচনে সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরের সব পদেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত এবং বিদ্রোহী প্রার্থীরাই জয়ী হয়েছেন। এদের মধ্যে দলের মনোনয়ন না পেয়ে ৩৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সাতজন বিদ্রোহী প্রার্থী ও সংরক্ষিত আসনে একজন বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। নির্বাচিতদের মধ্যে ১৯ জন নতুন প্রার্থী। এই নির্বাচনে বিএনপি বা জামায়াতের সমর্থিত কোনো প্রার্থী জয় পায়নি।