বেশি দামের আশায় বাজারে অপুষ্ট পেঁয়াজ
সারা দেশে যখন পেঁয়াজের দাম নিয়ে তুমুল হৈ চৈ, জরুরি ভিত্তিতে বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে- সেই সময় দেশের পেঁয়াজ ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলায় কৃষকরা আগাম জাতের পেঁয়াজ ঘরে তুলতে শুরু করেছে। তবে এই পেঁয়াজ এখনো তেমন একটা পরিপুষ্ট হয়নি। কিন্তু বেশি দামের আশায় কৃষকরা নির্ধারিত সময়ের আগেই জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে বাজারে আনতে শুরু করেছে।
আগাম জাতের এ পেঁয়াজ গত শনিবার সাঁথিয়ার করমজা হাটে এবং আজ রোববার কাশীনাথপুরের হাটে পাইকারি প্রতিকেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
গতকাল শনিবার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা হাটে প্রায় ২০ মণের মতো নতুন পেঁয়াজ উঠেছিল বলে হাটের আড়তদারদের সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া আজ রোববার পাবনার কাশীনাথপুর হাটে আট মণের মতো নতুন অপোক্ত পেঁয়াজ ওঠে। নতুন পেঁয়াজ ওঠার পর পরই পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে।
আজ পুরোনো দেশি পেঁয়াজ প্রতি মণে ১১০০ টাকা কমে বিক্রি হতে দেখা যায়। গত শুক্রবার একই হাটে প্রতিমণ পুরোনো দেশি পেঁয়াজ ৯ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। আজ একই মানের পেঁয়াজ কাশীনাথপুরের হাটে বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ সাত থেকে নয় হাজার (প্রতি কেজি ১৭৫ থেকে ২২৫) টাকায়।
কৃষক ও পেঁয়াজের আড়তদাররা জানিয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আগাম জাতের পেঁয়াজ পুরোপুরিভাবে বাজারে আসতে শুরু হলে আরো দাম কমে যাবে।
স্থানীয় কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাঁথিয়া উপজেলায় প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে কৃষকরা আগাম জাতের পেঁয়াজ (মূলকাটা) লাগানো শুরু করেন। সেই পেঁয়াজের বেশিরভাগই কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে কৃষকরা আবারও আগাম জাতের বা মূলকাটা জাতের পেঁয়াজ লাগান। কিন্তু সেই পেঁয়াজেরও অক্টোবরের শেষ সপ্তাহের বৃষ্টিতে অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়। কৃষকরা আবারও নতুন করে মূলকাটা বা আগাম জাতের পেঁয়াজের শুরু করেছে।
সাঁথিয়া কৃষি কার্যালয় থেকে আরো জানা যায়, সেপ্টেম্বরের শেষ ও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে যে পেঁয়াজ লাগানো হয়েছিল তার মধ্য থেকে কিছু জমির পেঁয়াজ কোনোরকমে টিকে যায়। সেই পেঁয়াজই কৃষকরা জমি থেকে তুলে নিয়ে বাজারে এসেছে।
চাষিরা জানায়, এসব পেঁয়াজ আরো আট থেকে ১০ দিন জমিতে থাকলে পুরোপুরি পুষ্ট হতো। কিন্তু কৃষকরা অগ্নিমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখে সেই অপুষ্ট পেঁয়াজই বাজারে নিয়ে আসছে।
পাবনা জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর পাবনা জেলায় ছয় লাখ ৫০ হাজার ৯৫৮ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যে ৪৯ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৫০ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাঁথিয়া উপজেলায় এবার ১৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
পাবনা জেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয়ে থাকে দুই পদ্ধতিতে। এর একটি হলো মূলকাটা ও অপরটি হলো হালি। মূলকাটা পদ্ধতির পেঁয়াজই আগাম জাতের পেঁয়াজ নামে পরিচিত। জমিতে লাগানোর পর এ পেঁয়াজ ঘরে উঠতে ৫০ দিনের মতো সময় লাগে।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, ৪৫০ হেক্টর জমিতে মাসখানেক আগে এ ধরনের পেঁয়াজ লাগানো হয়েছে। যেগুলো বৃষ্টি থেকে কোনোরকমে টিকে গেছে। সেই পেঁয়াজ কৃষকরা জমি থেকে তুলে বাজারে নিয়ে আসছে।
গতকাল শনিবার উত্তরাঞ্চলের অন্যতম পেঁয়াজের বাজার সাঁথিয়ার করমজা হাটে প্রায় ২০ মণ নতুন পেঁয়াজ উঠে। তবে নতুন পেঁয়াজের তুলনায় হাটে পুরোনো দেশি পেঁয়াজের আমদানি ছিল বেশি। নতুন পেঁয়াজ পাইকারি প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে পুরোনো দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ১৭৫ থেকে ২২৫ টাকায়। মাত্র একদিন আগে গত শুক্রবার একই হাটে নতুন পেঁয়াজ না উঠলেও দেশি পুরোনো পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।
হাটে নতুন পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা সাঁথিয়া উপজেলার হুইখালী গ্রামের পেঁয়াজচাষি মো. খোকন মীর বলেন, ‘আর ১০ থেকে ১২ দিন জমিতে থাকলি এই পেঁয়াজ পোক্ত হইয়া যাইত। ফলনও বাড়ত। গত কয়েক বছর ধইর্যা পেঁয়াজের আবাদ কইর্যা দাম না পাওয়ায় লছ খাইছি। কিন্তু এবার দাম বেশি দেইখ্যা সময়ের আগেই পেঁয়াজ তুইল্যা বাজারে নিয়্যা আইছি।’
করমজা হাটের পেঁয়াজের আড়তদার মুন্নাফ আলী প্রামাণিক বলেন, ‘নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। নতুন পেঁয়াজের কারণেই হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক একদিনের ব্যবধানেই আজ পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকার মতো কমেছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ পাবনার উপপরিচালক আজহার আলী সরকার বলেন, ‘বাজারে নতুন যে পেঁয়াজ উঠছে, তা পুরোপুরি পোক্ত বা পুষ্ট নয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মূলকাটা পদ্ধতির প্রচুর নতুন পেঁয়াজ কৃষকরা বাজারে নিয়ে আসবে বলে আশা করছি।’
তবে এই পেঁয়াজ বাজারে আসার মাধ্যমে দাম আর বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানান উপপরিচালক।