বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২
ঢাকার শ্যামবাজার এলাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় সবশেষ ৩২ জনের মৃতদেহ উদ্ধারের তথ্য জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-চাঁদপুর রুটের ময়ূর-২ নামের একটি লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কায় মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ ভেঙে দু-টুকরো হয়ে নদীতে ডুবে যায়।
এর পরই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কোস্ট গার্ড ও নৌপুলিশের পক্ষ থেকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয় বলে দুপুরের দিকে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের উপসহকারী পরিচালক মো. এনায়েত হোসেন এনটিভি অনলাইনকে জানান।
পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তদরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই ঘটনায় আমরা এখনো পর্যন্ত ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। এর ভেতরে পুরুষ ২১ জন, নারী আটজন এবং তিনটি শিশু রয়েছে।’
‘এখনো পর্যন্ত আমরা জীবিত কাউকেই পাইনি। তবে দু-একজন হয়তো বেঁচে যেতে পারেন। যাঁরা ঘটনার সময় হয়তো সাঁতরে ঘাটে গিয়ে বাঁচতে পেয়েছেন। এখন আমরা পানির নিচে ডুবে থাকা লঞ্চটির অংশবিশেষ উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। জানি না ওর ভেতরে লাশ রয়েছে কি না।’
সব মিলিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্ণেল জিল্লুর রহমান বলেন, তদন্ত শেষে আরো বিস্তারিত জানা যাবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তদরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘মর্নিং বার্ড‘ লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জ থেকে ছেড়ে এসে ঢাকার সদরঘাট টারমিনালের কাছাকাছি চলে এসেছিল। কিন্তু সে সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছিল ঢাকা-চাঁদপুর রুটের ময়ূর-২ নামের আরেকটি লঞ্চ। লঞ্চটি মর্নিং বার্ডকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে মনিং বার্ড ভেঙে দ্বি-খণ্ডিত হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে দ্বি-খণ্ডিত লঞ্চটি ডুবে যায় পানিতে। ভিডিওতে তেমনটিই দেখা যাচ্ছে।
নিহতদের পরিবার পাবে দেড় লাখ টাকা
বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় মৃত প্রত্যেকের পরিবারকে দেড় লাখ টাকা এবং প্রতিটি লাশ দাফনের জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
আজ সোমবার সদরঘাটে লঞ্চডুবির ঘটনা পরিদর্শনে এসে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘সিটিভি ফুটেজ দেখে বুঝা গেছে, এটি দুর্ঘটনা নয় হত্যাকাণ্ড।’
দুটি তদন্ত কমিটি গঠন
লঞ্চডুবিতে ৩২ জনের প্রাণহানির ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
আজ সোমবার সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করে এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। অপরদিকে বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে চার সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) মো. রফিকুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক এবং বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (নৌনিরাপত্তা) মো. রফিকুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটি আগামী সাত দিনের মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবে। কমিটি দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তি ও সংস্থাকে শনাক্তকরণ এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় উল্লেখ করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ প্রদান করবে।
এর আগে এ ঘটনায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। চার সদস্যদের ওই কমিটিকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে লঞ্চডুবির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বিষয়টি মনিটরিং করছেন।