বুকে চাকুর আঘাত নিয়ে পিকআপ থেকে লাফিয়ে মারা যান আপন
রাজধানীর দক্ষিণখানের বাসা থেকে গভীর রাতে বের হন আপন মিয়া ও তাঁর সঙ্গী নজরুল ইসলাম। উদ্দেশ্য কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজার। বিমানবন্দর থানাধীন কাওলা ফুটওভার ব্রিজের পূর্ব পাশে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন তাঁরা। সে সময় একটি পিকআপ ভ্যান হাজির হয়। গাড়ির চালক জানান, কারওয়ান বাজার যাবে পিকআপটি।
আপন ও নজরুল পিকআপে ওঠার পরে পিকআপের পেছনে যাত্রীবেশে থাকা ডাকাতেরা তাঁদের দুজনের কাছে থাকা টাকা ও মুঠোফোন কেড়ে নেয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আপন মিয়ার বুকে ছুরি মারলে তিনি পিকআপভ্যান থেকে লাফিয়ে পড়েন খিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ডের বটগাছের পাশে।
আপন লাফিয়ে পড়লেও নজরুল ইসলামকে ডাকাতেরা তখনও আটকে রেখে দেয়। পরে নজরুলকে আরো নির্যাতন করেন তারা। এরপর বনানী এলাকায় নৌবাহিনীর সদর দপ্তরের পাশের রাস্তায় তাঁকে চলতি পিকআপ থেকে ফেলে দেয়। সেখান থেকে নজরুল চলে যান আপনকে খুঁজতে। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে নিজেদের মেসে চলে যান নজরুল। মেসে গিয়ে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। একপর্যায়ে দুপুরের দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে আপনের লাশ খুঁজে পান। ঘটনা গত বছরের ২৬ ডিসেম্বরের।
এ ঘটনায় গত ৬ জানুয়ারি আপন মিয়ার স্ত্রী শুকিয়া সাব্বির (২৬) একটি হত্যা মামলা করেন বিমানবন্দর থানায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কবির হোসেন। তিনি আজ বুধবার সন্ধ্যায় মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানান।
মামলার পর থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
আজ বুধবার রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানিয়ে বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন সজল, মুসা, বাচ্চু, সজীব, মুন্না ও সিদ্দিক। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপ গাড়ি ও চাকু এবং লুট করা সাত হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।’
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পাইকারি সবজির আড়ত বসে। স্বল্প আয়ের ব্যবসায়ীরা সেসব আড়ত থেকে সবজি কিনে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল সাধারণত রাত ১১টা বা ১২টার পর থেকে একটি ভাড়া করা পিকআপ নিয়ে ডাকাতির উদ্দেশ্যে বের হয়। ডাকাত দল আড়তে আসা স্বল্প আয়ের ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে। টার্গেট ব্যক্তিদের আড়তে নেওয়ার উদ্দেশ্যে সুকৌশলে তাদের গাড়িতে তোলে। গাড়িতে তোলার পর যাত্রীবেশে থাকা ডাকাতদলের সদস্যরা ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এরপর চলন্ত গাড়ি থেকে তাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।’
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘স্বল্প আয়ের ব্যবসায়ীরা এমন ঘটনার সম্মুখীন হলেও সাধারণত থানায় কোনো অভিযোগ জানায় না। তাই এ ঘটনাগুলো পুলিশের অজানাই থেকে যায়।’ সে সময় এমন ঘটনার শিকার হলে পুলিশকে অবহিত করার জন্য সবার কাছে অনুরোধ জানান পুলিশের এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
এ কে এম হাফিজ আক্তার আরো বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা আব্দুল্লাহপুর থেকে কারওয়ান বাজার, রামপুরা থেকে যাত্রাবাড়ী ও যাত্রাবাড়ী থেকে ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় পিকআপযোগে ডাকাতি করে। পিকআপের সামনের সিটে তিনজন বসে এবং বাকিরা যাত্রী বেশে পিকআপের পেছনে থাকে। ঢাকা মহানগরীর যেসব এলাকায় মাছ, ফলমূল ও সবজির পাইকারি আড়ত বসে, সেখানে যারা মালামাল কিনতে যায়, তাদেরকে তারা টার্গেট করে পিকআপের যাত্রী হিসেবে উঠায়। এভাবে তারা সপ্তাহে একাধিক দিন ডাকাতির জন্য বের হয়। প্রতিদিন তারা কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটায়।’