বুকভরা কষ্ট নিয়ে চলেই গেলেন ছাত্রলীগের বাবু
সাতক্ষীরায় নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ছাত্রলীগের ওবায়দুর রহমান রিয়াদ বাবু (২৬)। তিনি খুলনার বিএল কলেজের ছাত্র ছিলেন।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের হরিশ্চন্দ্রকাটি গ্রামের বাড়িতে কীটনাশক খেয়ে যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকেন বাবু। বাড়ির লোকজন তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসারত অবস্থায় রাত ৮টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
বছর দুয়েক আগে মায়ের মৃত্যুর পর থেকে খানিকটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন রিয়াদ বাবু। ছোট থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করলেও প্রত্যাশিত পদ পাননি। এতে তিনি আরো হতাশ হয়ে পড়েন। এ ছাড়া বোনের বিয়ে নিয়েও হতাশায় ভুগছিলেন তিনি।
রিয়াদ বাবু তাঁর হতাশার কথা ব্যক্ত করে কীটনাশক খাওয়ার ২০ মিনিট আগে নিজের ‘ত্যাড়া মুন্সী বাবু’ ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন।
রিয়াদ বাবুর চাচা মিজবাহ রহমান জানান, রিয়াদ ছাত্রলীগের ইউনিয়ন সভাপতি হতে নেতাদের পেছনে এক লাখ টাকা ব্যয়ও করেছিল। কিন্তু কোনো লাভ না হওয়ায় সে চরম হতাশায় পড়ে। ফেসবুকে সে উল্লেখ করেছে যে এক সপ্তাহ আগে সে বাজার থেকে কীটনাশক সংগ্রহ করে আনে। এরপর তা নিজের বালিশের নিচে রেখে দেয়।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদি রাসেল জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বাবুর স্ট্যাটাসে যা আছে, হুবহু নিচে দেওয়া হলো :
‘নিজের কাছেই অবাক লাগছে।
আজ এক সপ্তাহ হলো...
বিষের বোতলটা আমার বালিশের নিচে পড়ে আছে, স্পষ্ট দেখতে পারছি।
সবাই নির্বাক হয়ে গেছে।
ছোটো ভাইটা পাগলপ্রায়।
জানি ছোট বোনটা খুব কাঁদছে।
অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি হয়তো!
এমনটা তো হবার কথা ছিল না।
জানেন?,
সেদিন খুব কেঁদেছিলাম আমি।
যেদিন আমার হাতটা ছেড়ে দিয়েছিলেন সোহাগ দাদা। আমার বাঁচার শেষ আশাটুকু ছিলেন উনি।
অঝরে কেঁদেছি সারা রাত এই কদিন।
প্রতি রাতে বালিশ ভিজিয়েছি চোখের জলে।
একটিবারও খোঁজ নাওনি কেমন ছিলাম আমি।
আর,
দোস্ত তোদের অনেক ধন্যবাদ।
ফেসবুকে আমাকে নিয়ে লেখালেখি করছিস।
তবে কি জানিস?
বাস্তবে এতটা সময় তোরা যদি দিতি...
তাহলে,
না থাক কিছু না,
জানি তোমরা খুব কাঁদছো।
জানি খুব ভালোবাসতে আমাকে। হয়তো ঘৃণাও করতে অনেকে।
যদি আর একটু খোঁজ করতে, আমার সমস্যাগুলো শুনতে...
যদি আমার দিকে আর একটু খেয়াল রাখতে...
যদি সবকিছু নির্ভয়ে বলতে পারতাম তোমাদের...
তাহলে আজ হয়তো...
ছোট বোন,
কাঁদিস না লক্ষ্মীটি।
হয়তো সব থেকে বড় অন্যায়টা তোর সাথে হলো!
মাফ করে দিস তোর এই অপরাধী ভাইটিকে।
জানি এই ভুলের কোনো ক্ষমা নেই।
ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষগুলো।
দূর থেকে না হয় দেখলাম সবার হাসিমাখা মুখ।
ভালো থেকো সবাই, হয়তো ফিরার ইচ্ছা থাকলেও চাইলে পারব না।
ক্ষমা করে দিয়ো তোমাদের সন্তানকে।
এখানে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।
সবাইকে ছেড়ে থাকাটা অনেক অনেক বেশি কষ্টের।
অনেক বেশি ভুল করে ফেলেছি।
ইশশ যদি আর একটু সময় পেতাম।
কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না।
ভালো থেকো সবাই।
দূর থেকে দেখব সবাইকে।
ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষগুলো।
ক্ষমা করে দিবেন এই বাজে ছেলেটাকে।
আমি নাকি খারাপ, হুম মানলাম বাট হয়তো এমন কাউকে পাবেন না যে প্রমাণ করতে পারবে আমি খারাপ। কারণ আমি আজ অবধি এমন কোনো কাজ করিনি যে প্রমাণ করতে পারবেন। ছোটোবেলা থেকে আমার রক্তে মিশে আছে রাজনীতি। আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তার দেখানো পথেই চলে আসছি আজ অবধি। চাকরি বা বিয়ে কোনোটাই করিনি ছাত্রলীগ করব বলে। বাট আজ দলও টাকার কাছে জিম্মি। আমার জীবনে আর কি বাকি আছে, হয়তো বেঁচে থাকতাম দুমুঠো ভাতের জন্যে। কিন্তু যখন অসহায় মানুষগুলো কাঁদে আমি তাদের কান্না সহ্য করতে পারি না। আমার নেতা বঙ্গবন্ধুও পারেনি। তাই তো সে নিজের জীবন দিছে তবুও হার মানেনি, লড়াই করে গেছে অন্যায় এর বিপক্ষে সারাজীবন। আমিও অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে পারিনি তাই আমি খারাপ। আমার জীবনে আজ অবধি যতো খারাপ সময় তার সবকিছু এই রাজনীতির জন্যে। ভবিষ্যতের কথা ভাবিনি কখনো, আজ জীবনের এই শেষ সময় ক্যানো জানি মনে হচ্ছে এই ছাত্রলীগের নেশাটাই আমাকে শেষ করে দিলো। হারিয়েছি সব, ঘর, পরিবার, ভালোবাসার মানুষ, কাছের মানুষ সব সবকিছু হারিয়েছি এই রাজনীতির জন্যে। তাই চলে গেলাম এই নিষ্ঠুর সার্থের পৃথিবী থেকে।
ক্ষমা করে দিবেন আমাকে।’