বিজু’র ফুলে রঙিন পাহাড়ি জলাশয়
সূর্য উঠবে উঠবে করছে। আবছা আলোয় তখন জলাশয়ের দিকে দলে দলে ছুটছেন পাহাড়ি নারী-পুরুষ। সমবেত হন নদী, খাল, হ্রদের তীরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই খাগড়াছড়ির চেঙ্গী নদী, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদসহ পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন জলাশয় হয়ে ওঠে ফুলে ফুলে রঙিন। ফুল ভাসিয়ে প্রার্থনায় বসে যান পাহাড়ি শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। করোনায় দুই বছর বিরতির পর বিজু উৎসব করতে পেরে খুশি তারা।
ছোট্ট শিশুরা নদীতে আনন্দ উল্লাস করে নতুন বছরকে আহ্বান জানান। সব মিলিয়ে আজ মঙ্গলবার ‘বৈসাবি’ উৎসবের প্রথম দিনের ভোরে ‘ফুলবিজু’র দৃশ্য হয়ে ওঠে উপভোগ্য।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের অন্যতম এই সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব ঘিরে মুখর পার্বত্য জনপদ। নতুন বর্ষবরণ ও পুরাতন বর্ষ বিদায় জানাতে প্রস্তুত সবাই।
আজ ফুলবিজুর পর কাল বুধবার মূল বিজুর দিন চলবে বাড়িবাড়ি বেড়ানো আর নানান স্বাদের খাবার গ্রহণের পালা। পরদিন ‘গজ্যাপজ্যা দিন’ বা ‘বিশ্রামের দিন’ পালন করবে পাহাড়িরা।
আগামী ১৬ এপ্রিল রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় সাংগ্রাই জলোৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের বৈসাবি উৎসব।
আবার আগামীকাল ত্রিপুরারা ‘বৈসু’ ও পহেলা বৈশাখ এবং মারমারা ‘সাংগ্রাই’ উৎসব শুরু করবেন। ত্রিপুরাদের ‘গরয়া নৃত্য’ আর মারমাদের ‘পানি উৎসব’ পাহাড়ে বর্ষবরণের অন্যতম আকর্ষণ।
এদিকে বৈসাবিসহ পাহাড়িদের বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে এরই মধ্যে পাহাড়ের পল্লীতে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ঐহিত্যবাহী খেলাধুলায় মেতেছে পাহাড়িরা।
করোনার দুই বছরের বেদনা ভুলে আবারও প্রিয় বৈসাবি উদযাপন করতে পেরে খুশি সবাই। ফুল বিজুর নানা আয়োজনে উপস্থিত বিশিষ্টজনরাও জানালেন নিজেদের উচ্ছ্বাস, প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষার কথা।
এনটিভি অনলাইনের রাঙামাটি প্রতিনিধি ফজলে এলাহী জানান, আজ মঙ্গলবার সকালে শহরের রাজবাড়ি ঘাটে বিজু সাংগ্রাই বিষু বিহু সাংক্রান্ত উদযাপন কমিটির উদ্যোগে ফুল ভাসানো অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি সবাইকে বৈসাবি ও বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘বৈচিত্র্যের এই উৎসবে আমি বিমোহিত। এই উৎসব আমাদের এক করে দিয়েছে। এটাই বাংলার চিরায়ত রূপ। এভাবেই অনন্তকাল চলবে।’
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের রাঙামাটি জেলা সভাপতি ইন্টুমনি চাকমা বলেন, ‘আমরা সবাই সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করতে চাই, এটাই আজকের দিনে আমাদের প্রত্যাশা।’
হিলর প্রোডাকশনের সভাপতি সুপ্রিয় চাকমা শুভ বলেন, ‘এটা খুবই আনন্দের যে, করোনাকে জয় করে আমরা আবার উৎসবে ফিরতে পেরেছি। এই উৎসব আমাদের প্রাণের উৎসব। পার্বত্য চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকে সুরক্ষা ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বইবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। আমরা সারা দেশের মানুষকে বিজুর শুভেচ্ছা জানাই।’
এনটিভি অনলাইনের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি আবু তাহের মুহাম্মদ জানান, সেখানে নদীতে গঙ্গদেবীর উদ্দেশে ফুলপুজো করে চাকমারা আজ ‘ফুল বিজু’ উদযাপন করছেন। ভোরে খাগড়াছড়ি সদরের খবংপুজ্যা এলাকা দিয়ে চেঙ্গী নদীতে ফুল দিয়েছেন শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। নদীতে নানা রঙের ফুল উৎসর্গ করেছেন তারা। এতে রঙিন সাজে সেজে ওঠে চেঙ্গীনদী।