বাজারে কোন জিনিসের দাম কত বেড়েছে, জানালেন মির্জা ফখরুল
নিত্যপণ্যের বর্তমান বাজার তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বাজারের প্রতিটি জিনিসের দাম ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেছে।’ আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে সবাইকে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান বাজারদর তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৯ থেকে ৬০ টাকায় আর মোটা চালের কেজি ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা। প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা, ডালডা ১৫ থেকে ১৬ টাকা, প্রতি লিটার পামতেলে ১৬ থেকে ১৭ টাকা, ময়দায় বেড়েছে ১০ টাকা। ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে ১৬ থেকে ২০ টাকা।’
‘এ ছাড়া শীতকালীন সবজি অগ্নিমূল্যের চিত্র শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, প্রতি পিস ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় আর মুলার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। প্রতি কেজি শসা ৯০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, আধাপাকা টমেটো ১২০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৮০ টাকা, নতুন আলু ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ধনেপাতা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, বরবটি ৯০ টাকা, শালগম ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০ টাকা, চিচিঙ্গার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, কচুরলতি ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ টাকা ও কচুরমুখী ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।’
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, “এসব পণ্যের বাজারমূল্য সম্পর্কে আমরা এখানে উপস্থিত সবাই ওয়াকিবহাল। বাজার থেকে খাবার টেবিল—এ দুই জায়গার বাস্তবচিত্রই ঘুরেফিরে আমাদের সামনে আসে। তবে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহতায় মানুষের জীবন কতটা দুর্বিষহ হতে পারে, তার পুরোটা আমাদের জানা সম্ভবই হয় না। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ কতটা অসহায়, তার একটা উদাহরণই তাদের মানবেতর জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারণা দিতে সক্ষম।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে গ্রাম থেকে আসা এক শিক্ষার্থীর সহজ স্বীকারোক্তি হচ্ছে এ রকম, ‘বাজারে সবজির মূল্যবৃদ্ধির ফলে সবজি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ, বাজারে এমন কোনো সবজি নেই, যার মূল্য ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে! এমনকি পেঁয়াজপাতার দামও হচ্ছে কেজিতে ১০০ টাকা।’ প্রশ্ন ছিল, তাহলে তাদের খাদ্য তালিকায় কী থাকে। উত্তর ছিল ডিম এবং যথারীতি এক বাটি পানিসমৃদ্ধ ডাল! তাও একটা ডিম দুজনে ভাগ করে খায়!’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “পেঁয়াজের দুর্মূল্য নিয়ে মাস কয়েক ধরে আমরা কথা বলছি। দেশের সব গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিদিন রিপোর্ট হচ্ছে। সরকারপ্রধান নিজেও ‘পেঁয়াজ বিমানে উঠে গেছে, আর কোনো সমস্যা নাই’ বলেই এয়ার শো দেখতে দুবাই থেকে ইডেনে গার্ডেনস হয়ে এখন আবার মাদ্রিদ শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর এদিকে পেঁয়াজের ঝাঁজ এখন চাল, ডাল, লবণ, তেল, আদা, রসুন থেকে শুরু করে শীতকালীন সব সবজিতে সংক্রমিত হয়েছে। মোটকথা, দৈনন্দিন জীবনে রান্নার জন্য ব্যবহৃত প্রতিটি জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমানার বাইরে চলে গেছে। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা গত কয়েক দিনে প্রকাশিত কিছু সংবাদ শিরোনামই পরিষ্কার করে।”
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘বর্তমান অবৈধ সরকার পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে জনগণকে পেঁয়াজ খেতে নিষেধ করছে। তাহলে চালের মূল্য কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা, আটার মূল্য ৫ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে তারা এখন কী বলবেন! ভাত খাওয়া বন্ধ করে দিতে? রুটি খাওয়া বন্ধ করে দিতে? ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে, সুতরাং তেল খাওয়াও কি বন্ধ করে দিতে হবে?’