ফেনী কারাগারে বিয়ে হওয়া দম্পতির খোঁজ নিলেন হাইকোর্ট
আদালতের আদেশে ফেনী জেলা কারাগারে ধর্ষণ মামলার আসামি জহিরুল ইসলাম ওরফে জিয়া উদ্দিনের সঙ্গে ভুক্তভোগী তরুণীর বিয়ে হয় ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর। যা ছিল ধর্ষণ মামলার কোনো আসামির সঙ্গে ভুক্তভোগীর প্রথম বিয়ে। ওই বিয়ের পর অনেক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তাদের সংসার এখন কেমন চলছে, তারা সুখে আছেন কি না, সে বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল। এ সময় অন্য একটি রিট মামলার শুনানিতে অংশ নেন ধর্ষণ মামলার সেই আসামির আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারুক আলমগীর চৌধুরী।
এ সময় তাঁর কাছে আদালত জানতে চান, জিয়া উদ্দিন দম্পতি কেমন আছে? তাদের সংসার কেমন চলছে?
জবাবে আইনজীবী বলেন, আমি মাঝে মধ্যেই ফোন করে তাদের খোঁজ-খবর নেই। তারা সুখে আছেন।
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে অবহিত করে হাইকোর্ট বলেন, আমরা আদেশ দিয়ে জেলখানায় বিয়ে দিয়েছিলাম। এটা নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন রকমভাবে লেখালেখি হয়েছিল। তাদের দাম্পত্য জীবনটা কেমন হয়, এটার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। এ কারণে অ্যাডভোকেট ফারুক আলমগীর চৌধুরীকে বলেছি, সব সময় তাদের প্রতি খেয়াল রাখবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আদালত আজ জানতে চেয়েছিলেন, জিয়া উদ্দিন দম্পতির সংসার কেমন চলছে? আমি বলেছি, তাঁরা সুখে আছেন। কারণ আমি সব সময় তাদের খোঁজ-খবর নেই। এ ছাড়া আমি অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রস্তাব করেছি, তাদের বাড়ি পরিদর্শনে যাওয়ার। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, করোনা শেষে প্রয়োজনে তিনি আমাদের সঙ্গে যাবেন।
গত বছরের ২১ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশের পর ফেনী জেলা কারাগারে ধর্ষণ মামলার আসামির সঙ্গে ভুক্তভোগী তরুণীর বিয়ে হয়। বর ও কনেসহ দুই পক্ষের উপস্থিতিতে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। ওইদিন সকালে মিষ্টি নিয়ে দুইপক্ষের আত্মীয়-স্বজনসহ আইনজীবীরা কারাগারের ফটকে হাজির হন। পরে বিয়ের মূল আয়োজন সম্পন্ন করতে আসেন ফেনী জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান এবং বিয়ের কাজী আবদুর রহিম। এ সময় ছয় লাখ টাকা দেনমোহর এবং এক লাখ উসুল ধার্য করে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এ সময় মিষ্টিমুখ করে দুই পরিবারের সদস্যরা কোলাকুলি করেন।
গত বছরের ২৭ মে ফেনীর সোনাগাজীর এক তরুণী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যের ছেলে জহিরুল ইসলাম জিয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। ওই বছরের ২৯ মে জিয়াকে গ্রেপ্তার করে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ। পরে তাঁর পরিবার তরুণীর পরিবারের সঙ্গে আপস-মীমাংসা করেন। জিয়া ওই তরুণীকে বিয়ে করবেন এমন কথা জানিয়ে তাঁর পক্ষে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করা হয়। হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের আদালত জিয়াকে জামিন না দিয়ে কারাফটকে জিয়া ও ভুক্তভোগী তরুণীর বিয়ের আয়োজন করার জন্য ফেনী কারাগারের তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। বিয়ের পর আদালত জহিরুল ইসলাম ওরফে জিয়া উদ্দিনকে এক বছরের জামিন দেন।