‘পৃথিবীতে কোনো স্বৈরশাসক টিকে থাকতে পারেনি, আওয়ামী লীগও পারবে না’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘স্পষ্টভাবে বলতে চাই, পৃথিবীতে কোনো স্বৈরশাসক, একনায়ক, ফ্যাসিস্ট শাসক টিকে থাকতে পারেনি। জনতার উত্তাল রোষের মধ্যে তাদের পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। তখন আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আজ বুধবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আয়োজনে ‘করোনা হেল্প সেন্টারের’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
‘এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারও টিকে থাকতে পারবে না। তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই আমি সরকারকে বলব, এখনও সময় আছে, দেয়ালের লেখনীগুলো পড়ুন। মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন, মানুষের মনের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন। আপনাদের ব্যর্থতার জন্য পদত্যাগ করুন’, যোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সে অপরাধ থেকে যদি রক্ষা পেতে চান, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে জনগণ যেন তার পছন্দের সরকার নির্বাচিত করতে পারে সে ব্যবস্থা করুন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব নেতার কথা বলেন? আরে, নেতা তো বাংলাদেশে একজনই। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি একমাত্র নেত্রী, যিনি এ দেশে দীর্ঘ নয় বছর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখনও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে তিনি গৃহবন্দি হয়ে আছেন। মিথ্যা মামলায় তাঁকে বেআইনিভাবে সাজা দেয়া হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমাদের ইসহাক সরকারসহ সব ছাত্রনেতা, যুবনেতার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। থানায় নিয়ে গিয়ে তাদের পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। আমরা ভুলে যাইনি সেসব কথা। এখনও ঘরে ঘরে গিয়ে পুলিশ হয়রানি করছে। কারণ কী? কারণ, বিএনপি জেগে উঠেছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধায়নে নতুন করে বিএনপিকে সাজানো হচ্ছে, নতুন কমিটি করা হচ্ছে। এতে করে নতুন জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য তাদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি হয়েছে। তারা ভয় পেয়েছে, ভয়ে কাঁপছে। তাই তারা বিএনপির ওপর আবার আক্রমণ শুরু করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, করোনার শুরু থেকে আমরা আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ত্রাণ দিয়ে আসছি। কিন্তু, যারা আজ অস্ত্র দেখিয়ে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, তারা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, ডেঙ্গুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষে জনগণের সমস্যা সমাধানে এ সরকারের কোনো আগ্রহ নাই। সরকার সব ক্ষেত্রে কী রকম তেলেসমতি কাণ্ড ঘটিয়েছে, তা আপনার নিজ চোখে দেখেছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আছেন, যাঁর প্রতিটি কথা মিথ্যা। তাঁরা করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। শুধু করোনা নয়, গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলেছে। এখন আপনারা কেউ খুব অসুস্থ হয়ে হঠাৎ ইমার্জেন্সিতে গেলে সেখানে কোনো চিকিৎসা পাবেন না। বাংলাদেশে এখন স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। শুধু স্বাস্থ্য খাতে নয়, দেশের প্রতিটি সেক্টরে চরম অরাজকতা, দুর্নীতি ও নৈরাজ্য বিরাজ করছে। কারণ, যারা এখন দেশ চালাচ্ছে, তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়নি। জনগণ তাদের দেশ চালানোর দায়িত্ব দেয়নি। তাই তাদের কোনো জবাবদিহিতা নাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন—১৯৭২-৭৫ সালে বাকশাল গঠনের মাধ্যমে যেভাবে এক ব্যক্তির পূজা হয়েছিল, আজ আবার একইভাবে এক ব্যক্তির পূজা শুরু হয়েছে। তারা বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলছে। এর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাতে হবে।