পুলিশ গিয়ে দেখল, মডেল নাজের ঝুলন্ত লাশ
সন্ধ্যায় বাবা মনিরুল ইসলামের সঙ্গে পারিবারিক বিষয়ে মুঠোফোনে ঝগড়া হয় বাংলাদেশি মডেল সাদিয়া ইসলাম নাজের (২১)। ঝগড়ার মধ্যেও রাত ১১টা পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে কথোপকথন চলে। কিন্তু তারপর পরিবার আর যোগাযোগ করতে পারছিলেন না নাজের সঙ্গে। ঘটনা গতকাল সোমবারের।
যোগযোগহীনতার একপর্যায়ে নাজের বাবা মনিরুল ইসলাম বাসার দারোয়ানের মুঠোফোনে কল দেন। তিনিও ফোন ধরছিলেন না। পরে বাধ্য হয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করেন মনিরুল। ৯৯৯ থেকে এ তথ্য ভাটারা থানা পুলিশকে জানানো হয়।
খবর পেয়ে মঙ্গলবার ভোররাত ৪টার দিকে পুলিশ গিয়ে নাজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। ঘটনা ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি ব্লকের ২১ নম্বর রোডের ৭৯২ নম্বর বাসার দ্বিতীয় তলার।
ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোক্তারুজ্জামান নাজের বাবা মনিরুল ইসলামের বরাত দিয়ে এনটিভি অনলাইনকে এ সব তথ্য জানান।
মোক্তারুজ্জামান বলেন, ‘ওই বাসায় নাজ একাই থাকতেন। নাজের বাবার সঙ্গে আমার কথা হয়। তিনি জানিয়েছেন, নাজের সঙ্গে মুঠোফোনে পারিবারিক কিছু বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ হয়। রাত ১১টা পর্যন্ত বাবা-মেয়ের কথা হয়। তারপর তাঁর বাবা আর যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। পরে ভোররাতে আমরা ওই বাসায় যাই।’
‘বাসায় গিয়ে দেখি, ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগানো। পরে আমরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকি। তখন দেখা যায়, গলায় শাড়ি পেচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছেন সাদিয়া নাজ। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে নিয়ে যাই। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবাবের কাছে লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ যোগ করেন ওসি মোক্তারুজ্জামান।
এ ঘটনায় ভাটারা থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছেন মনিরুল ইসলাম। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাফিজুর রহমান। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘যে বাসায় নাজ থাকতেন, ওই বাসায় দ্বীপ নামের এক ছেলের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। দ্বীপ নাজের প্রেমিক বলে তাঁর বাবার কাছ থেকে আমরা জেনেছি। পারিবারিকভাবে এ প্রেমের কথা সবাই জানতেন। দ্রুতই তাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। দ্বীপ মনিরুল ইসলামকে বাবা বলে ডাকতেন। দ্বীপের বাড়ি সিলেটে। তিনি সেখানেই থাকেন।’
হাফিজুর রহমান বলেন, ‘দ্বীপ সিলেটে থাকলেও নাজের বাসায় প্রায়ই থাকতেন। সর্বশেষ ৭ জানুয়ারি দ্বীপ ওই বাসা থেকে চলে যান। তারপর থেকে আর আসেননি। গতকাল রাতেও দ্বীপের সঙ্গে নাজের কথা হয়েছে। নাজের মুঠোফোনে কল দিলেও যখন তিনি ধরেননি, তখন দ্বীপ বাসার দারোয়ানের সঙ্গে কথা বলেন। পরে দারোয়ান ফোনটা নাজের কাছে দিলে সর্বশেষ রাত ১২টার সময় তাদের মধ্যে কথা হয় বলে দ্বীপ আমাকে জানিয়েছেন। তারপর দ্বীপও আর যোগাযোগ করতে পারেননি।’
এসআই হাফিজুর বলেন, ‘আমাদের ধারণা পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদের জেরে নাজ আত্মহত্যা করেছেন। বাকিটা তদন্ত করে দেখতে হবে। ওই ফ্ল্যাটের ভেতরে একটি সিসি ক্যামেরা ছিল। সেটা এখনো নিয়ে আসা হয়নি। আমরা তদন্তের স্বার্থে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখব। তারপর ঘটনা বোঝা যাবে।’