পাবনা-৪ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়
পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের উপনির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আলহাজ মো. নুরুজ্জামান বিশ্বাস জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আজ শনিবার রাত ৯টার দিকে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল লতিফ শেখ ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া দুই উপজেলার মোট ১২৯টি ভোটকেন্দ্রের ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করেন।
ঘোষণা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুজ্জামান বিশ্বাস নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন দুই লাখ ৩৯ হাজার ৯২৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৫৭৬ ভোট। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী রেজাউল করিম খোকন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন তিন হাজার ৭৪ ভোট।
পাবনা-৪ আসনে এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৮১ হাজার ১১২ জন।
ঈশ্বরদী উপজেলায় মোট ভোটকেন্দ্র ৮৪টি। এই উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৫৪ হাজার ৯৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ২৮ হাজার ১৭৬ জন এবং নারী ভোটারের সংখ্যা এক লাখ ২৫ হাজার ৯২১ জন।
আটঘরিয়া উপজেলায় ভোটকেন্দ্র ৪৫টি। এই উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ ২৭ হাজার ১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৩ হাজার ৫৩৬ জন এবং নারী ভোটারের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৪৭৯ জন।
এদিকে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের মধ্যে দিয়ে আজ পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সকাল ১০টার দিকে ঈশ্বরদীর কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মোট দুই হাজার ৪৫৭ ভোটের মধ্যে সকাল ১০টার দিকে ভোট পড়েছিল ৩০টি।
প্রিজাইডিং অফিসার মনোজিৎ কুমার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। তবে কোনো অঘটন নেই।
সাহাপুর শহীদ আবুল কাশেম উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করে দেখা যায়, সেখানে মোট তিন হাজার ৪৮৮ ভোটের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়ে ৪৩২টি। এই কেন্দ্রের ভোটার বিএনপি প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব।
এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমি এই কেন্দ্রে বিএনপির কোনো পোলিং এজেন্টের সন্ধান পাইনি।’
১০টি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেও দেখা যায়, ভোটারদের উপস্থিতি খুব কম এবং কেন্দ্রগুলোতে বিএনপির কোনো পোলিং এজেন্ট ছিল না। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর একাধিক পোলিং এজেন্ট সব কেন্দ্রে দেখা গেছে।
পাবনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল লতিফ শেখ বলেন, ‘সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে একটানা বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।’
এর আগে আজ দুপুরে বিএনপি প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব ভোটের কোনো পরিবেশ নেই উল্লেখ করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানান। গ্রামের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, ‘এই সরকার নির্লজ্জভাবে ভোট করছে। কোনো রকম ভোটের পরিবেশ নেই। ভোটের আগের দিন আমাদের নেতাকর্মীদের নামে তিনটি মামলা করে এলাকাছাড়া করা হয়েছে। ১২৯টির কোনো কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট দিতে দেওয়া হয়নি। এখানে কোনো নির্বাচনই হয়নি। এ কারণে এই নির্বাচন বাতিল চেয়ে পুনর্নির্বাচন দাবি করছি।’
এদিকে, দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘বিএনপির প্রার্থী হাবিবুর রহমান ভোট করতে নয়, ভোট বাণিজ্য করতে প্রার্থী হয়েছিলেন।’
এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনের জন্য নয়, ব্যবসার জন্য নির্বাচনে আসে। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার বা নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করার তাদের কোনো লক্ষ্য নেই, তাই আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে হাবিব মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন। বিএনপি নির্বাচনকে গুরুত্ব সহকারে নেয়নি, তাদের নেতারা দাবি করেছেন যে, তারা আন্দোলনের অংশ এবং আনুষ্ঠানিকতার জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তারা কোনো জায়গায় নির্বাচনী মাঠে কাজ করেনি। কেবল মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মোশারোফ হোসেন, পৌর মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু, আওয়ামী লীগের নেতা কামরুজ্জামান উজ্জ্বল, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আলী মতুর্জা বিশ্বাস সনিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নেতারা।