পশুরহাট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ স্থান, ব্যক্তিগত সতর্কতাই ভরসা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য এবং করোনা বিষয়ক টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘পশুরহাট অত্যন্ত ঝুঁকির স্থান। এটা নিয়ে তেমন কিছু করারও সুযোগ নেই। কেননা এখানে ধর্মীয় বিষয় জড়িত। আবার এ পেশার সঙ্গে অনেকে যুক্ত। যাদের আয়ের একমাত্র উৎস হলো পশুর ব্যবসা। সেজন্য হাঁট বসবেই। এখন দেখার বিষয় হলো, আমরা সতর্কতার সঙ্গে কতটুকু থাকতে পারি। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
অধ্যাপক নজরুল আরো বলেন, ‘ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সবার সচেতনতা ছাড়া এ মুহূর্তে কোনো বিকল্প নেই। কোরবানি ঈদের পর দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা বেশি।’
ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের উদ্যোগে আজ শুক্রবার ‘করোনা পরিস্থিতি, স্বাস্থ্যসেবা ও জাতীয় বাজেট : বর্তমান প্রেক্ষাপট ও করণীয়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম এসব মন্তব্য করেন।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম আবু সাঈদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. কাজী রকিবুল ইসলামের সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক ডা. এইচ এম ফারুকী।
অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ছাড়াও এতে মতামত তুলে ধরেন বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব, বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার, করোনাবিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম, অধ্যাপক ডা. চন্দন কান্তি দাস, অধ্যাপক ডা. শাকিল আখতার, ডা. এ কে এম আরিফ উদ্দিন আহমেদ, ডা. রোকেয়া খাতুন, ডা. আব্দুল আজিজ প্রমুখ।
অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতিবাজদের বিল বন্ধ করে দেওয়াটাই সমাধান নয়। দুর্নীতিবাজদের বিচার করাটাই মুখ্য বিষয়। স্বাস্থ্য সরঞ্জামের সরবরাহ ঠিক রাখাটাও প্রয়োজন। তা না হলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।’
অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাত যতক্ষণ দুর্নীতিমুক্ত না করা যাবে ততদিন এ খাতে বাজেট বৃদ্ধি করে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সবার বিচার করতে হবে।’
অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, সবাইকে সরকারের গাইডলাইন মেনে চলা উচিত। এতে নিজের পরিবার এবং জনগণ- সবাই এ মহামারির হাত থেকে রক্ষা পাবে। জ্বর, সর্দি-কাশি হলে আবল-তাবল ওষুধ সেবন না করে তিনি ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলন থেকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কয়েকটি দাবি উপস্থাপনসহ স্বাস্থ্য খাতের বাজেট সম্পর্কে বেশকিছু প্রস্তাবনা ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, কোভিড-১৯ কে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা, বিনামূল্যে কোভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা, সব সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালসমূহকে রিকুইজিশন করে কোভিড ও নন-কোভিড চিকিৎসার ব্যবস্থা, জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাকর্মী নিয়োগ, অবিলম্বে মানসম্মত র্যাপিড টেস্ট কিট বিনামূল্যে আপামর জনগণের জন্য উন্মুক্ত, একযোগে সারা দেশব্যাপী কোভিড-১৯ অত্যধিক আক্রান্ত এলাকাসমূহে (রেড জোন) লকডাউন দৃঢ়ভাবে চালু রেখে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ইজারাদারদের পকেট ভারি করার কোরবানির হাট বসানোর সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার।