নৌকা নিয়ে ফাতেমার ভিক্ষাবৃত্তি, লক্ষ্য বিদেশি পর্যটক
দুই মেয়ে আর দুই ছেলেকে নিয়ে নদীতে নৌকায় করে ভিক্ষা করেন ফাতেমা খাতুন। সন্তানদের দেখিয়ে এভাবে ভিক্ষা করে প্রতিদিন তাঁর আয় তিন থেকে চার হাজার টাকা। অনেক সময় মার্কিন ডলারসহ বিদেশি মুদ্রাও হাতে পড়ে। এই ফাতিমা খাতুনের ভিক্ষা আদায়ের লক্ষ্য শুধুমাত্র বিশ্বঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত সুন্দরবন দেখতে আসা দেশিবিদেশি পর্যটকেরা।
মংলা বন্দর পার হয়ে খুলনা জেলার অন্তর্গত সুন্দরবনের করমজল ফরেস্ট অফিস। খুলনা থেকে সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেখতে যাওয়া বিদেশি পর্যটকদের নৌযান যখন পশুর নদীর মধ্যে নোঙর করে তখন দূর থেকেই নৌকায় ভিক্ষার জন্য হাত পেতে চিৎকার করতে থাকে ফাতেমা। বড় নৌযান থেকে ছোট ডিঙি নৌকায় ওঠার সময় ফাতেমা আর তাঁর সন্তানদের আকুতি দেখে দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা তাদের সাহায্য করেন। সম্প্রতি এ প্রতিনিধি সুন্দরবন ভ্রমণকালে এ চিত্র ধরা পড়ে তাঁর চোখে।
জানতে চাইলে নিজের স্বামী আবুল হোসেন মারা গেছেন বলে জানান ফাতেমা। তাই বর্তমানে এভাবে নৌকা নিয়ে নদীতে ভিক্ষা করে সংসার চালান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফাতেমা বলেন, ‘আমার বাড়ি মোংলা শেলাবুনিয়া ইউনিয়নের কানাই নগরে। চেয়ারম্যান তারেক আর মেম্বার সেলিম আমাকে কোনো সাহায্য দেয়নি। কোনো কার্ডও পাইনি।’
ফাতেমা আরো বলেন, ‘আমার স্বামী মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর হলো। তাই পরিবার নিয়ে এভাবে নৌকায় করে পর্যটকদের কাছে ভিক্ষা করি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে ভেসে ভেসে থাকি। নৌকার ভেতরেই রান্না ও খাওয়া দাওয়া করতে হয়।’
বিলাসবহুল ক্রুজারের সঙ্গে থাকা ট্রলার মাঝি করিম বলেন, ‘আগের জাহাজে এক বিদেশির কাছ থেকে একশ ডলারসহ প্রায় দেড় হাজার টাকা পেয়েছে ফাতেমা।’
বিলাসবহুল নৌযানগুলো নোঙর করার সময় ফাতেমা ছেলেমেয়ে নিয়ে চিৎকার করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অনেক পর্যটক মনে করেন তিনি ছেলেমেয়ে নিয়ে কোনো বিপদে পড়েছেন। তাই সাহায্য করেন।
ছেলেমেয়েদের নিয়ে কেন এভাবে ভিক্ষে করেন? এমন প্রশ্ন করলে ফাতিমা একটু রেগে জবাব দেন, ‘ছেলেমেয়েদের কোথায় রেখে আসব? জাহাজে জাহাজে এভাবে সাহায্য নিয়েই সংসার চলে।’
ফাতেমার মেয়ে সাজু বলে, ‘ট্রলারে বেশি টাকা পাওয়া যায় না, তবে জাহাজে অনেক বেশি হয়। কয়েকবার তো একজন একাই দুই হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছে।’
সুন্দরবন ট্যুর অপারেটর মালিক সমিতির নেতা মাজহারুল ইসলাম কচি বলেন, ‘নৌকায় দেশি বিদেশি পর্যটকের কাছে ভিক্ষে করে ফাতেমা বেশ টাকা ইনকাম করেন। তাই অন্য কিছু করতে চায় না। পর্যটন মৌসুম শুরু হলেই নিয়মিত তাঁকে নদীতে দেখা যায়। বিদেশিদের কাছে এভাবে ভিক্ষা করায় দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু দেখবে কে?’