নেত্রকোনায় একসঙ্গে একই পরিবারের ৫ জনের জানাজা
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় চলছে শোক। একসঙ্গে পাঁচটি লাশ দাফন সম্পন্নের আগে পরিবারের স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা পাচ্ছিলেন না কেউ। শুধুই কান্না আর কান্না। কারণ একসঙ্গে এতগুলো লাশের জানাজা, যারা পড়তে এসেছেন তারাও স্তব্ধ।
আজ সোমবার পূর্বধলার আগিয়া ইউনিয়নের ফেচুয়ালঞ্জি গ্রামে গিয়ে একই পরিবারের নিহত ছয়জনের মধ্যে একসঙ্গে পাঁচজনের জানাজা ও দাফন সম্পন্নের আগে দেখা যায় এমন দৃশ্য। বেলা সাড়ে ১১টায় ফেচুয়ালঞ্জি গ্রামে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে নিহতদের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়।
জানাজায় পূর্বধলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ রাজু আহমেদ রাজ্জাক সরকার, আগিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম রুবেল, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও আগিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ মৌলভী, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফয়জুর সিরাজ জুয়েল, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ তালুকদার ও সানোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। পরে তাদের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
যে পাঁচজনের লাশ একসঙ্গে দাফন হয়, তাঁরা হলেন, মাওলানা ফারুক মিয়া (২৫), তাঁর স্ত্রী মাসুমা আক্তার (২০), তাঁদের তিন দিন বয়সের নবজাতক শহিদুল্লাহ, নিহত ফারুকের বড় ভাই নিজাম উদ্দিন (২৭) ও আরেক বড় ভাই আজিম উদ্দিনের স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগম (২৫)।
অপর দিকে ফারুকের বড় বোন তামান্না আক্তার জুলেখার (৩২) লাশ তাঁর স্বামীর বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সিধলা গ্রামে দাফন করা হয়েছে বলে জানান নিহতের স্বজনরা। আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক রাকিবুলকে চরনিখলিয়ায় দাফন করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার মাওলানা ফারুকের স্ত্রী মাসুমার প্রসববেদনা শুরু হলে প্রথমে তাঁকে পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে নেওয়া হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে স্বাভাবিকভাবে ফুটফুটে এক ছেলে শিশুর জন্ম হয়। গতকাল রোববার দুপুরে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে অটোরিকশায় করে তাঁরা বাড়িতে ফিরছিলেন। সঙ্গে ছিলেন অন্যরা। এ সময় ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার গাছতলা নামক স্থানে নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিপরীত দিক থেকে আসা শাহজালাল নামের একটি বাসের সঙ্গে অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই সাতজন নিহত হয়। পরে শ্যামগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা লাশ উদ্ধার করেন এবং লাশগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন।
আজ জানাজার সময় সবার মুখে মুখে ছিল এই মৃত্যুর মিছিলের করুণ বর্ণনা। অনেকেই স্মৃতিচারণ করেন, কেউ কেউ কাঁদেন। কেউ বা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
আগিয়া ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, যানবাহনের চালকেরা যদি সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালান তবে এ ধরনের মৃত্যু এড়ানো সম্ভব। এক ঝটকায় পরিবারটির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।
পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে কুলসুম জানান, ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি রোববার রাতেই নিহতদের বাড়িতে গিয়ে ওই টাকা থেকে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা নিহত মাওলানা ফারুক মিয়ার বড় ভাই আজিম উদ্দিনের হাতে তুলে দেন।
পূর্বধলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘এ দুর্ঘটনায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। পরিবারটির প্রতি আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’