নগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে উপেক্ষিত নারীরা
শিক্ষা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত নারীদের সংখ্যা বাড়ছে। প্রশাসন, বিভিন্ন বাহিনীসহ সরকারি বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে।
আওয়ামী লীগের পদগুলোতেও নারীদের সংখ্যা বাড়ছে। তবে এখনো পুরোপুরি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নারীদের পদ দিতে পারছে না তারা। সদ্য ঘোষিত ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দুটি কমিটিতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংরক্ষিত চার ভাগের এক ভাগ পদও পাননি নারীরা।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৫ এর ৪ ধারায় বলা আছে, ২০২১ সালের মধ্যে ক্রমান্বয়ে পূরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদসহ দলের সব স্তরের কমিটিতে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ পদ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। নারী-পুরুষের সমতা আনার লক্ষ্যে ক্রমবর্ধমান হারে এই অনুপাত বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সম্মেলনের ১১ মাস পর গত ১৮ নভেম্বর ৯২ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এর মধ্যে অন্তত ৩০টি পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকার কথা। কিন্তু স্থান পেয়েছেন মাত্র সাতজন, যা মোট সদস্যের ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ।
একটানা ৩৯ বছর ধরে সফলতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে আজ পর্যন্ত শীর্ষ পদে কোনো নারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
এবারের ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন এস এম মান্নান কচি।
উত্তরের কমিটিতে উপদেষ্টা রয়েছেন ১৬ জন। এর মধ্যে নারী মাত্র একজন, তিনি হলেন নুরুন নাহার খান। একই চিত্র সহসভাপতি পদে। এখানে ১১ জনের মধ্যে নারী একজন। তিনি হলেন জাহানারা বেগম।
সম্পাদকীয় ২৭টি পদের মধ্যে মাত্র তিনটি পদ পেয়েছেন নারীরা। এর মধ্যে বরাবরের মতো এবারও মহিলা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন একজন নারী। তিনি হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহেরুন নেসা মেরী। সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন অ্যাডভোকেট রোকেয়া সুলতানা পলি এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন কর্নেল (অব.) ডা. কানিজ ফাতেমা।
কমিটিতে কার্যকরী সদস্য হিসেবে আছেন ৩৬ জন। এর মধ্যে নারী সদস্য হলেন দুইজন। তাঁরা হলেন নাসিমুল হক কুসুম ও আফরোজা খন্দকার।
কমিটিতে নারীদের সংখ্যা কম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছিলাম আরো কিছু নারীকে যুক্ত করতে। বিভিন্ন কারণে দিতে পারিনি। তবে আমরা চাই সংগঠনের তৃণমূলে নারীদের আরো সম্পৃক্ত করতে যেন আগামীতে আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মানজনক স্থানে রাখতে পারি।’
উত্তরের কমিটির পরের দিনই ১০২ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এর মধ্যে অন্তত ৩৩টি পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকার কথা। কিন্তু স্থান পেয়েছেন মাত্র সাতজন, যা মোট সদস্যের ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
এই কমিটিতে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফী। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মো. হুমায়ুন কবির।
কমিটিতে উপদেষ্টা রয়েছেন ২৭ জন। এর মধ্যে নারী মাত্র একজন। তিনি হলেন সাবেক কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট জাহানারা বেগম রোজী।
একই অবস্থা সহসভাপতি পদে। এখানে ১১ জনের মধ্যে নারী একজন। তিনি হলেন সাবেক কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য সাজেদা বেগম।
সম্পাদকীয় ২৭টি পদের মধ্যে মাত্র একটি পদ পেয়েছেন একজন নারী। আর এটি হলো মহিলা বিষয়ক সম্পাদকের পদে। গত কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাহমিনা সুলতানা এবারও একই দায়িত্ব পেয়েছেন।
কমিটিতে কার্যনির্বাহী সদস্য রয়েছেন ৩৬ জন। এর মধ্যে চারজন নারী। তাঁরা হলেন সাবেক কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দা রোকসানা ইসলাম চামেলী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালমা আক্তার কেকা, সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লাভলী চৌধুরী ও ফাতেমা আক্তার ডলি।
কমিটিতে নারীদের সংখ্যা কম থাকার বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্রে আছে ঠিকই। তবে আপনি দেখেন, বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলে এর চেয়ে বেশি নারী সদস্য আছে কি না। সবাই দুই-এক শতাংশের বেশি পদ দেয়নি।’
গঠনতন্ত্রের কথা উল্লেখ করলে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের নারীদেরও রাজনীতিতে আরো সম্পৃক্ত করতে হবে। আমরা আরো বেশি নারীদের বিভিন্ন কমিটিতে রাখতে চেষ্টা করছি।’
যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে বেশি নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি গঠনতন্ত্রে যে টার্গেট দেওয়া আছে, তা পূরণ করতে। নারীদের ক্ষমতায়নে ও রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার জন্য আমরা আরো কাজ করছি। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব।’