নওগাঁয় বিএনপির সম্মেলনে এক পক্ষের হামলা, আটক ৪
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সম্মেলন চলাকালে অপর পক্ষের হামলায় কমপক্ষে ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার একটি কমিউনিটি সেন্টারে সম্মেলনের সময় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলার ঘটনায় সাবেক ডেপুটি স্পিকার প্রয়াত আকতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-৩ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনিসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
আটক অন্য ব্যক্তিরা হলেন বিএনপিকর্মী শহিদুল ইসলাম, শাহিনুর রহমান ও সাজেদুর রহমান। তাঁরা সবাই পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও নবনির্বাচিত মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম বুলেট, উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ হায়দার, বিএনপিকর্মী এরশাদ আলী, সাইফুল ইসলাম, জাকির হোসেন, শাহিন আলম, হারুনুর রশিদ, সুমন ইসলাম, সেকেন্দার আলী ও বাশার আলী।
বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে মহাদেবপুর উপজেলা সদরের মাস্টারপাড়া এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে উপজেলা বিএনপির সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী সোহেল। সকাল থেকেই সম্মেলনে যেতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাধা দিতে থাকেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনির সমর্থকরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা বিএনপির সম্মেলনস্থলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুস সাত্তার নান্নুর নেতৃত্বে তাঁদের কর্মী-সমর্থকরা হামলা চালায়। হামলায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও নবনির্বাচিত মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল ইসলাম বুলেটসহ তাঁর পক্ষের ১০ নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আহতদের মধ্যে চারজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াছত হায়দার টগরকে আহ্বায়ক করে উপজেলা বিএনপির ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকে বিএনপির দুপক্ষের বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়। পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনির সমর্থকরা আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল। তাঁদের অভিযোগ, আহ্বায়ক কমিটিতে দলে নিষ্ক্রিয় ও রবিউল আলম বুলেটের পক্ষের লোকজনকে বেশি পদ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির একটি পক্ষে নেতৃত্বে রয়েছেন পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী এবং অপর পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন রবিউল আলম বুলেট।
নবনির্বাচিত মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম বুলেট অভিযোগ করেন, ‘পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি সম্মেলন বানচাল করার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী ভাড়া করে আমাদের ওপর হামলা করিয়েছেন। কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতাদের উপস্থিতিতে সম্মেলন চলাকালে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে মারপিট ও কমিউনিটি সেন্টারে ভাঙচুর করে। এ সময় তাদের হামলায় আমার নয়জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।’
পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকীর সমর্থক উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুস সাত্তার বলেন, ‘রবিউল আলম বুলেট জেলা বিএনপি ও কেন্দ্রীয় কিছু নেতাকে ভুল বুঝিয়ে প্রকৃত বিএনপি নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। এখন তাঁর লোকজন নিয়ে কমিটি ঘোষণার চেষ্টা করছেন। সম্মেলন চলাকালে প্রকৃত বিএনপির নেতাকর্মীদের কমিটিতে পদ দেওয়ার দাবি জানালে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়।’
মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, উপজেলা বিএনপির সম্মেলন চলাকালে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি নেতা পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনিসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে গতকাল বিকেল ৩টার দিকে উপজেলা বিএনপির সম্মেলন শেষ করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান মাস্টার সর্বসম্মতিক্রমে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রবিউল আলম বুলেটকে সভাপতি, আবদুল মতিনকে সাধারণ সম্পাদক ও সাজ্জাদ হোসেনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করেন।