নওগাঁর একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স গত ১৩ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেন ২২ এপ্রিল। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ১৮ দিন পর অর্থাৎ আজ সোমবার তাঁর নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ ফল এসেছে।

ওই নার্স গত ৫ মে করোনা পরীক্ষার জন্য এন্টিজেন্টসহ আরটিপিসিআরের জন্য নমুনা দেন। ওইদিনই এন্টিজেন্ট পরীক্ষার ফলাফল পান। সেখানে করোনা নেগেটিভ ফল আসে।

এন্টিজেন্ট পরীক্ষার ফলাফল আসার পর নার্স স্বস্তি পেয়ে জানিয়েছিলেন, আর বোধহয় ঝামেলা হবে না। আরটিপিসিআরের ফলও নেগেটিভ আসতে পারে। কিন্তু না, আজ সোমবার ফলাফল হাতে পান তিনি। সেখানে দেখা গেছে, করোনা পজিটিভ। এতেই তিনি শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

ওই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, নার্স দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পরে এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে আজ সোমবার রাতে তিনি এই প্রতিবেদককে এসব তথ্য জানান।

ওই নার্স বলেন, ‘আজ বিকেলেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জানানো হলো, আমার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। তবে খুব একটা শারীরিক জটিলতা দেখছি না। বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বলেছে, বাসায় আইসোলেশনে থেকে বিশ্রাম করতে। অক্সিজেন প্রবাহ বা স্যাচুরেশন যেন না কমে। এমন কিছু অনুভব করলেই যেন হাসপাতালে জানাই।’

‘প্রথম যখন এন্টিজেন্ট টেস্টের রিপোর্ট পাই তখন মনে হয়েছিল পরের টেস্টেও ফলাফল নেগেটিভ আসবে। কিন্তু এলো পজিটিভ। এখন মুখে কোনো স্বাধ গন্ধ নেই। জ্বর বাড়ে আর কমে। এভাবেই চলছে। এখন থেকে ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকব। নিজের জন্য যতটা ভয় হচ্ছে, বাবা-মার জন্য তারচেয়ে বেশি ভয় লাগছে। এই খবর উনারা শুনলে খুব চিন্তা করবেন’, বলছিলেন নার্স।

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ওই কমপ্লেক্সের একজন মেডিকেল অফিসারও দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ঘটনা এপ্রিলের শেষের দিকের। আজ তাঁর ১৪ দিন আইসোলেশনের শেষ দিন। ওই মেডিকেল অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিনি ভালো আছেন। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরও মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। সেজন্য যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

এসব ব্যাপারে কথা হলে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভাইরোলজিস্ট) অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। তবে টিকা তাঁর মৃত্যু ঝুঁকি কমিয়ে দেবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরও যেহেতু করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন, সেজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। মাস্ক পরতেই হবে।’

সামনেই ঈদ। মানুষ গ্রামে ফিরছেন। এতে করোনার ঝুঁকি আরও বেড়ে যেতে পারে জানিয়ে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষ মরণের ভয় করছে কিনা আমি জানি না। তবে আমি ভয় পাচ্ছি, একবার যদি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বড় পরিসরে দেশে ঢুকে পড়ে; তাহলে মহা বিপদ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। আমাদের এই মুহূর্তে ভীষণ সতর্ক হওয়া দরকার। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকারের কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প পথ খোলা নেই।’