দ্বিতীয়বার করোনা পরীক্ষা না করে সুস্থ ঘোষণা, পরদিনই মৃত্যু
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষা না করেই সুস্থ ঘোষণা করা হয় মনসুর রহমান (৫২) নামের এক ব্যক্তিকে। গতকাল রোববার তাঁকে সুস্থ ঘোষণা করে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এর ২৪ ঘণ্টা না যেতেই আজ সোমবার ভোরে মৃত্যু হয় মনসুরের। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
মনসুর রহমান উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঝিকরা গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে।
সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মধু জানান, সুস্থ ঘোষণার পর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ রোববার মনসুর রহমানের বাড়ি লকডাউনমুক্ত করে। দ্বিতীয়বার তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হয়নি। অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, বাড়ির বাইরে যাওয়ারও। কিন্তু আজ সকালে নিজ বাড়িতেই তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর বিষয়টি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান জানান, গত ৬ জুন মনসুর রহমানের করোনা শনাক্ত হয়। এর পর থেকে তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। আগে থেকে তাঁর উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যা ছিল। আজ ভোরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি।
ডা. আশিকুর রহমান আরো জানান, গত ২ জুন মনসুর রহমানের নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী ল্যাবে পাঠানো হয়। পরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেলে গত ৬ জুন থেকে তাঁকে নিজ বাড়িতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। গত রোববার হোম কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হলে তাঁর বাড়ি লকডাউনমুক্ত করা হয়। এরপর আজ সোমবার ভোর ৫টার দিকে নিজ বাড়িতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দ্বিতীয়বার মনসুরের করোনা পরীক্ষা করা হয়নি বলে স্বীকার করেন আশিকুর।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা সামিরা জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আছে, কারো শরীরে যদি করোনার উপসর্গ না থাকে, তবে একটা নির্দিষ্ট সময় পর তাঁকে করোনামুক্ত বলা যাবে। সে অনুযায়ী রোববার চিকিৎসকরা মনসুরকে বলেছিলেন, চাইলে তিনি এখন বাড়ি থেকে বের হতে পারবেন। তবে তাঁর বাড়ির লকডাউন তুলে নেওয়া হয়নি। এটা করা হলে নিশ্চয় আমি জানতাম। তবে দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন ইউএনও।
এর আগে গত ৬ জুন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষায় মনসুরের করোনা শনাক্ত হয়। সেদিন যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে মনসুর রহমান জানিয়েছিলেন, তাঁর মধ্যে করোনার উপসর্গ নেই।
মনসুর আরো জানিয়েছিলেন, তিনি পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক হিসেবে কাজ করেন। ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন তিনি। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, সেখানে ঢুকতে হলে করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসতে হবে। সেজন্যই তিনি নমুনা দিয়েছিলেন পরীক্ষার জন্য। এতেই তাঁর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।
চারঘাটের ইউএনও সৈয়দা সামিরা জানান, মনসুর রহমান হৃদরোগে ভুগতেন। সে কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে যেহেতু করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছিল, তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে লাশ দাফন করতে বলা হয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ সোমবার দুপুরে জানাজা শেষে মনসুর রহমানকে ঝিকরা কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।