‘দোকান পুড়ছে মাকে বইল না, মা পাগল হয়ে যাবে’
ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের একটি কসমেটিকের দোকান আছে টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেটে। নাম ‘আল-মদিনা কসমেটিকস’। আজ বুধবার সন্ধ্যার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁর সেই দোকানটি।
রাত ৮টার দিকে নজরুল ইসলাম মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আমার সব কসমেটিকস পুড়ে গেছে ভাইরে। সব ছাই হয়ে গেছে। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আল্লাহ, আমার একি ক্ষতি করল।’
নজরুলকে পাশে থেকে ধরে ছিলেন তাঁর চাচাতো ভাই। বুঝা যাচ্ছিল নজরুল গ্রামের বাড়িতে বা পরিবারের কারো সঙ্গে কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমার মাকে এখন কিছু বইল না। আমার মা পাগল হয়ে যাবে।’
নজরুল চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আল্লাহ গো, এখন আমার কী হবে? দোয়া করো ভাই আমার জন্য।’
এরপর ফোনটি কেটে দিয়ে নজরুল সেটটি তাঁর চাচাতো ভাইয়ের হাতে দেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি শুনছি সোফার ফোমের দোকান থেকে আগুন লাগছে। আমার সব শেষ। আল্লাহ কী হবে এখন? আমার ছেলের লেখাপড়ার টাকা কোথায় পাব এখন। আমি আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলাম কিন্তু পারিনি। দাও দাও করে আগুন জ্বলে উঠেছে সব।’
আজ বুধবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে রাজধানীর ব্যস্ততম এই মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এখানে দেড় হাজারের বেশি দোকান রয়েছে। ব্যবসায়ীরা দ্রুততার সঙ্গে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। তারপর সেখান থেকে ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়। তিন ধাপে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট ঘটনাস্থেলে এসে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস।
আজ সকাল থেকেই দোতলা এই মার্কেট খোলা ছিল। নিচতলা ও দোতলা মিলিয়ে ক্রেতাও ছিল প্রচুর। সন্ধ্যায় দিকে জমজমাট অবস্থায় হঠাৎ করেই দোতলা থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করে। তারা জানায়, দোতলায় ১৫-২০টির মতো দোকান ছাড়াও গুদাম রয়েছে। সেখানে বেডসিট, কাপড়, খেলনা ও প্লাস্টিকের দোকান রয়েছে।
রাজধানী সুপার মার্কেট বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এখানে ছোটবড় কয়েক হাজার দোকান রয়েছে। এটি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। একতলা পাকা ভবনের উপর টিনের দোতলা এই মার্কেটের চারপাশেই রাস্তা রয়েছে। ফলে মার্কেটের চতুর্দিকে আটটি প্রবেশ পথ রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, মার্কেটের পূর্ব পাশে শার্ট-প্যান্টের দোকান, পশ্চিম পাশে খাবার, শাড়ি, হাড়ি-পাতিল, জুতার দোকান, উত্তর পাশে রয়েছে থান কাপড়ের দোকান আর দক্ষিণ পাশে জুয়েলারি ও কসমেটিকসের দোকান রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা আরো জানায়, এখানে দেশি পণ্যের পাশাপাশি থাইল্যান্ড, ভারত, জাপান, চায়না এবং পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত পণ্য সামগ্রীও পাওয়া যায়। বিদেশি পণ্যগুলোর মধ্যে কাপড়, স্যান্ডেল ও কসমেটিক্স সমাগ্রী রয়েছে।