দেশে এখন অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে : রিজভী
দেশের মানুষের সবকিছুই চেটেপুটে খাওয়ার জন্য সরকার ফের গায়ের জোরে ক্ষমতায় বসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি আরো বলেন, ‘দেশে এখন অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে।’ আজ শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা করেন রিজভী।
এ সময় বিএনপির জেষ্ঠ্য যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “গণতন্ত্র নেই, মানুষের বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা নেই, নেই মানবিক মর্যাদা। দেশে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। নারী ধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ এখন নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই জনগণের স্বাধীনতার জন্য আজ আমাদের স্লোগান ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’।”
রিজভী আরো বলেন, ‘শেখ হাসিনা এ বছরটি ঘোষণা করেছেন তাঁর পিতার নামে। মানুষের ধারণা ছিল, তাঁর পিতার সম্মানে হলেও মানুষকে একটু স্বস্তি ও নিরাপত্তা দেবেন। বন্ধ করবেন ব্যাংক ডাকাতি, লুটপাট আর টাকা পাচারের মহোৎসব। বন্ধ করবেন বিরোধী প্রতিপক্ষের প্রতি কুৎসা রটানো। কিন্তু প্রতিদিন হতাশার খবর ছাড়া আর কিছুই নেই। বরং আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, দেশজুড়ে নানা অপরাধের মধ্যে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধর্ষিত হচ্ছে নারী ও শিশু। অপরাধীদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীনদের লোক।’
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘রাষ্ট্র ও সমাজের সবখানেই এখন অনিয়ম আর দুর্নীতি। রেললাইন কিংবা ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহার নিয়ে তথ্যপ্রমাণসহ পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সরকারের টনক নড়েনি। দুর্নীতির দর্শনে বিশ্বাসী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় চৌর্যবৃত্তির ব্যাপক বিস্তার ছাড়া যে অন্য কিছু হবে না, সেটির ছবিই এখন চারিদিকে দৃশ্যমান।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গত এক দশকে দেশের সব লুটেরা-দুর্নীতিবাজ দেখেছে, এই সরকারের শাসনামলে চলছে দুর্নীতির উন্নয়ন আর উন্নয়নের নামে দুর্নীতি। অপ্রিয় হলেও সত্য, দুর্নীতি, লুটপাট, টাকা পাচার, ব্যাংক ডাকাতি, অনাচার-অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নৈতিক কিংবা সৎ সাহস কোনোটিই এই সরকারের নেই। কারণ, যেভাবে রডের বদলে বাঁশ দিয়ে এই সরকার সেতু কিংবা ভবন নির্মাণ করছে, ঠিক তেমনি এই সরকারটিও বারবার জন্ম নিচ্ছে প্রশাসনের সহায়তায় রাতের অন্ধকারে জনগণের ভোট ছাড়া। যে সরকারের জন্মই অবৈধ ও অনৈতিক, তাদের দ্বারা সুশাসন সম্ভব নয়। তাদের দ্বারা উন্নত ও মানবিক সমাজ সম্ভব নয়।’
রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে দুটো ইশতেহার থাকে—একটি ঘোষিত, আরেকটি অফ দ্য রেকর্ড। ঘোষিত ইশতেহারে ভালো ভালো কথা থাকলেও ক্ষমতায় আসার পর সেই ইশতেহারটির বদলে অফ দ্য রেকর্ড ইশতেহারের বাস্তবায়ন দেখা যায়, সেটি হলো, কর্তৃত্ববাদী বাকশালী শাসন, গণতন্ত্র হরণ, বিরোধীদল নিধন এবং অর্থনীতি লুণ্ঠন। এ কারণে দেখা যায়, নব্য বাকশালী নিশিরাতের সরকার আছে বলেই গত এক দশকে নয় লাখ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮১০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো হয়ে পড়েছে দেউলিয়া।’
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিদেশে রাজকীয় জীবনে শতাধিক ব্যাংক লুটেরা। পরিস্থিতি এমন যে ব্যাংক থেকে টাকা মেরে দেওয়া সবচেয়ে সহজ। এই উৎসবে মেতেছিলেন বেশ কয়েকজন। হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে তারা এখন লাপাত্তা।’
রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, দুবাই, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বিনা বাধায়, করছেন রাজকীয় জীবনযাপন, ব্যাংক থেকে টাকা মেরে বিভিন্ন সময় বিদেশে পালিয়ে গেছেন এমন শতাধিক লুটেরাকে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণের টাকা তুলতে না পেরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো এসব ঋণকে মন্দ ঋণ (খেলাপি) ঘোষণা করতে বাধ্য হচ্ছে। এমনকি এদের কারণে একটি অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়ন করা হয়েছে। এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছেন, বিদেশে করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান আছে কানাডাতেও। কয়েকশ কোটি টাকা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফজাল হোসেন।’