দিহান মাদক ও যৌনবর্ধক ওষুধ খেয়েছিলেন কি না, পরীক্ষার নির্দেশ
রাজধানীর কলাবাগানে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি ফারদীন ইফতেখার দিহান মাদক ও যৌনবর্ধক ওষুধ খেয়েছিলেন কি না, তা পরীক্ষা করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইয়াসমিন আরা এই নির্দেশ দেন।
এর আগে আজ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান আসামি ফারদীন ইফতেখার কোনো মাদক ও যৌনবর্ধক ওষুধ খেয়েছেন কি না, তা পরীক্ষার আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) স্বপন কুমার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ আবেদনে বলেছে, আসামি ফারদীন ইফতেখার দিহান ধর্ষণকালে কোনো মাদকসেবন করেছিলেন কি না তা জানার জন্য তার ডোপ টেস্ট করা প্রয়োজন। এ ছাড়া তিনি ধর্ষণকালে কোনো যৌনবর্ধক ওষুধ সেবন করেছিলেন কি না এবং সেবন করলে কোন ধরনের ওষুধ সেবন করেছিলেন তা দিহানের রক্ত থেকে নমুনা সংগ্রহপূর্বক পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রয়োজন।
গত ৭ জানুয়ারি দুপুরে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই ছাত্রীকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান দিহান। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ওই দিন দিবাগত রাতে নিহত ছাত্রীর বাবা কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দিহান গত ৮ জানুয়ারি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এ ছাড়া পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিহানের আরো তিন বন্ধুকে আটক করেছিল। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর আগে গত ১০ জানুয়ারি দিহানের ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইয়াসমিন আরা।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) আবুল হাসান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা আদালতের কাছে ডোপ টেস্টের অনুমতি প্রার্থনা করেছি। আশা করছি, আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে ডোপ টেস্টের অনুমতি দিয়ে দেবেন। অনুমতি পাওয়ার পর আমরা দিহানের ডোপ টেস্ট করব। সেখানে বেরিয়ে আসবে তিনি মাদকাসক্ত কি না। এ ছাড়া ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে আমরা জানতে পারব, ধর্ষণের আগে ওই ছাত্রীকে চেতনানাশক খাওয়ানো হয়েছিল কি না।’
আসামি ফারদীন ইফতেখার দিহানের বাসার দারোয়ান দুলাল গতকাল মামলার সাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি। সাক্ষ্য শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অপেক্ষা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের
বিকৃত যৌনাচারের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানিয়েছিলেন। গতকাল রাতে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা সন্দেহ করছি, ধর্ষণের পূর্বে ছাত্রীকে চেতনানাশক খাওয়ানো হতে পারে, নাও হতে পারে। আসলে শুধু শরীর দেখে অনেক কিছু বোঝা যায় না। সেজন্য ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইহসানুল ফেরদৌস আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আসামির মা বাসায় না থাকায় সুযোগ পেয়ে ভুক্তভোগীকে কলাবাগানের ওই ফাঁকা বাসায় ডেকে নেওয়া হয়। এরপর জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। পরে ওই ছাত্রীর জননাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।’
এডিসি আরো বলেন, ‘শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে ওই ছাত্রী মাথা ঘুরে পড়ে যায়। এরপর তাকে চিকিৎসার জন্য আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ওইদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে হাসপাতাল থেকে আমাদের বিষয়টি জানানো হয়। পরে আমরা লাশটি উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাই। আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল থেকে ধর্ষণের কথা বলা হয়েছে।’
এই ঘটনায় করা মামলার এজাহারে ছাত্রীর বাবা জানান, ওই ছাত্রী তার মাকে ফোন করে কোচিং থেকে লেখাপড়ার কাগজ আনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। হঠাৎ দুপুর একটা ১৮ মিনিটে ফারদীন ইফতেখার হিদান কিশোরীর মাকে ফোন করেন। সে সময় দিহান ফোনে জানান ছাত্রী তার বাসায় গিয়েছিল। আকস্মিক অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল নেওয়া হয়।
ঘটনার দিন ছাত্রীর মা এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘হাসপাতালে গিয়ে দেখি ওর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমার ধারণা, মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’