তূর্ণা-উদয়ন ট্রেনের সংঘর্ষ তদন্তে পাঁচটি কমিটি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা খতিয়ে দেখতে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোট পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ৩টায় উপজেলার মন্দবাগ এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা এবং সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রাম অভিমুখী উদয়ন এক্সপ্রেসের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে অর্ধশতাধিক যাত্রী। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পৌঁছান রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। এর আগে ঘটনাস্থলে আসেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন।
রেলপথমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার তদন্তে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর থেকে চারটি এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরো একটি—মোট পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’ এ ব্যাপারে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে আর কিছু বলেননি। পরে বিস্তারিত জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
তবে বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল) মিজানুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি কমিটি এবং চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে প্রধান করে চার সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অপরদিকে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিতু মরিয়মকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খান আরো বলেন, এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধারকাজ চলছে। নিহতদের শনাক্ত করে তাদের লাশ বাড়ি পৌঁছানোর জন্য প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
হতাহতদের নাম-পরিচয় প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি। তবে নিহতদের মধ্যে সাতজন পুরুষ, ছয়জন নারী ও তিনটি শিশু রয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে এনেছেন উদ্ধারকর্মীরা। আহতদের কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল, আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
সংঘর্ষের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-সিলেট পথে রেল যোগাযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী ট্রেন পৌঁছেছে। তাঁরা দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। সংবাদ পেয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার আনিছুর রহমানসহ জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তাঁরা উদ্ধারকাজ পর্যবেক্ষণ করছেন।
জেলা পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আখাউড়া, কসবা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কয়েকটি ইউনিট ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। তাঁরাও যাত্রীদের নিরাপত্তা ও উদ্ধারকাজে তৎপর রয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় উদয়ন এক্সপ্রেসের অন্তত দুটি বগি দুমড়েমুচড়ে গেছে। সকালের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এত মানুষের ভিড়ে উদ্ধারকাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে অনেকে উদ্ধারকাজে সহযোগিতাও করছেন।