তিনি দিনে ডাক্তার, রাতে ওয়ার্ড বয়!
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক দিনে ডাক্তার এবং রাতে ওয়ার্ড বয়ের কাজ করেন। আর এভাবে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ওই ওয়ার্ড বয় কাম ডাক্তারের নাম জাহিদুল ইসলাম। পাহাড়পুর একিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক তিনি। তিনি মানবিক বিভাগে ১৯৯৮ সালে মাধ্যমিক ও ২০০০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। নিজের পরিচয় দেন ডাক্তার হিসেবে। তাইতো নিয়মিত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোগী দেখছেন। তাঁর ওখানে রোগীদের অনেক ভিড়। রোগী দেখার পাশাপাশি নিজেই করছেন আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি ও এক্স-রে। তাঁর একই স্বাক্ষর রয়েছে ব্যবস্থাপত্রের পাশাপাশি প্রতিটি রিপোর্টে।
জাহিদুল ইসলাম নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার উত্তর রামপুর গ্রামের সুবিদ আলীর ছেলে। তিনি জয়পুরহাট জেলা সদরের রওশন ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ওটি বয় (অপারেশন থিয়েটারে সাহায্যকারী) হিসেবে কর্মরত। এখানে তিনি রাতের বেলা ডিউটি করেন এবং দিনের বেলা নিজের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তার সেজে রোগী দেখেন। প্রায় পাঁচ বছর ধরে অবৈধভাবে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি চালিয়ে আসছে তিনি।
পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই একিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অবস্থান। জাহিদুল ইসলাম জানান, রাতে তিনি জয়পুরহাটের একটি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ওটি বয় হিসেবে কাজ করেন। তাঁর নামের আগে ‘ডাক্তার’ শব্দটি ব্যবহার করেন না বলে তিনি দাবি করেন। তবে উপস্থিত রোগীদের কাছে নিজেকে ‘ডাক্তার’ হিসেবে পরিচয় দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি চুপ থাকেন।
এ ছাড়া এইচএসসিতে কোন কোন বিষয় পাঠ্য ছিল-এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলা এবং ইংরেজি ছাড়া অন্যগুলো তিনি মনে করতে পারেননি। ভারতের শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব অল্টারনেটিভ মেডিসিন কলকাতা থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়েছেন বলে দাবি করেন। তবে বলতে পারেননি এমবিবিএস এর অর্থ কী। মানবিক বিভাগের ছাত্র হয়ে ডাক্তারি পড়া যায় কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ওটা আমার ভুল হয়েছে।’
নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. এ বি এম আবু হানিফ বলেন, ‘একিয়া ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কানিজ ফারহানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিধিগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গতকাল রোববার সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ হলরুমে আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি আলোচনা করা হয়। উক্ত সভায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কানিজ ফারহানা বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর ত্রুটি রয়েছে।’
এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানোর পর নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।