ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১০ ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, ১১ মামলা
সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনের আওতায় আরোপিত বিধিনিষেধ শর্তাবলি তদারকিতে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় একযোগে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেছেন। সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের (আনিক) পাশাপাশি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলোতে নেতৃত্ব দেন।
অভিযানে সরকারি বিধিনিষেধ ভঙ্গ ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এবং অনুমোদনবিহীন দোকান খোলা রাখায় মোট ১১টি মামলা করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছেরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
দক্ষিণ সিটির অঞ্চল-১-এর আনিক মেরিনা নাজনিন আজ বেইলী রোড, মগবাজার, হাতিরপুল ও নিউ মার্কেট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে বেলা ৩টার পর যেসব দোকানপাট, কাচাবাজার, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল সে সব বন্ধ করা হয়। হাতিরপুল ও নিউমার্কেট কাচা বাজারে ব্যবসায়ীদের বাজারের বাইরে রাস্তার একাংশে বসে সাময়িকভাবে মাছ-মাংস, তরিতরকারি বিক্রিকে উৎসাহিত করেন।
অঞ্চল-২-এর আনিক সুয়ে মেন জোর তত্ত্বাবধানে শাহজাহানপুর বাজার, মতিঝিল কলোনি বাজার, শান্তিনগর বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় প্রায় ১৫০টি দোকান ও ব্যক্তিকে বিভিন্ন কারণে সতর্ক করা হয়।
অঞ্চল-৩-এর আনিক বাবর আলী মীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশী মোড় কাঁচাবাজার ও ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
অঞ্চল-৪-এর আনিক মো. হায়দর আলী ৩২, ৩৪, ৪২ ও ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুবাজার, কাপ্তানবাজার, ধোলাইখাল, বাহাদুর শাহ পার্ক ও লালকুঠি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন।
অঞ্চল-৫-এর আনিক মো. শাহীনুর আলম ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মানিকনগর বাজার ও ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের সূত্রাপুর বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন।
অঞ্চল-৬-এর আনিক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সরকার ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের টুলটুলিয়া বাজার ও ধীৎতপুর বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় তিনি সরকারি বিধিনিষেধ যথাযথভাবে পরিপালন না করায় প্রায় ৫০টি দোকানকে সতর্ক করেন।
অঞ্চল-১০-এর আনিক মোহাম্মদ মামুন মিয়া ৫৮, ৬০ ও ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামপুর ও দনিয়া এলাকাসহ আরও কয়েকটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন।
এ ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটির সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত খিলগাঁও ও সিপাহিবাগ বাজারসহ অঞ্চল ২-এর অন্যান্য বাজার ও দোকানপাট পরিদর্শন করেন। এ সময় সরকারী বিধিনিষেধ ভঙ্গ করায় আদালত পাঁচটি মামলা দায়ের ও আট হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।
করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিলা কবীর ত্রপা অঞ্চল-৩-এর পলাশী বাজারসহ আরও কয়েকটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন এবং সরকারি বিধিনিষেধ মেনে না চলায় দুটি মামলার মাধ্যমে এক হাজার ২০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ আজ অঞ্চল ৫, ৯ ও ১০ এর বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় আদালত সরকারের আদেশ না মেনে দোকান খোলা রাখা, মাস্ক না পরে জনসমাগমস্থলে ঘুরে বেড়ানোর অপরাধে চারটি মামলা করেন এবং পাঁচ হাজার ৯০০ টাকা অর্থদণ্ড আদায় করেন।
অভিযান প্রসঙ্গে করপোরশেনের সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুনিরুজ্জামানের বলেন, ‘জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবারের লকডাউন দৃশ্যমানভাবে মেনে চলছে। তারপরও কিছু কিছু জায়গায় সরকারি বিধিনিষেধ না মানার প্রবণতা আমরা দেখেছি। সাধারণত আমরা জনগণকে জরিমানা করতে চাইতে চাই না। কিন্তু জাতির বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় এবারের লকডাউনে আমাদের একটু কড়াকড়ি আরোপ করতেই হচ্ছে। সেই আলোকে আজ সরকারি বিধিনিষেধ ভঙ্গ করে দোকানপাট খোলা রাখায় পাঁচটি মামলা দায়ের ও তাদের জরিমানা করেছি।’
এ ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটির অন্যান্য অঞ্চলেও অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে আদালতগুলোর সঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলরবৃন্দ সশরীরে উপস্থিত থেকে সহযোগিতা করেন।
অভিযানে প্রায় সব আদালতই লকডাউনের নির্দেশনা মেনে চলতে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করেন। এ ছাড়াও বিনা প্রয়োজনে অযথা বাড়ির বাইরে বের না হওয়া, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়াও দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন এলাকায় লকডাউনের নির্দেশনাবলি মেনে চলতে মাইকিং করা হয় এবং নির্দেশনা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানার বিষয়টি বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়।