টাকাসহ পি কে হালদারকে ‘কানাডা’ থেকে ফেরত আনা সম্ভব
বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে কানাডায় পাড়ি জমানো এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) টাকাসহ দেশে ফেরত আনা সম্ভব বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম।
আজ বুধবার ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের বিষয়ে আপিল খারিজের পর সাংবাদিকদের এ মন্তব্য করেন আইনজীবী তানজীব উল আলম।
প্রশান্ত কুমার হালদার ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী তিনি এখন কানাডায় অবস্থান করছেন।
এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে দুই আমানতকারী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে ১৯ জানুয়ারি এ বিষয়ে আদেশ দেন। আদেশে প্রশান্ত কুমার হালদারসহ ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব আদেশের বিরুদ্ধে কোম্পানিটি আপিল বিভাগে আবেদন করে। যেটি বুধবার খারিজ হয়ে যায়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম।
খারিজ আদেশের পর ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম বলেন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং যে আপিল করেছে, সে আপিলটা খারিজ করে দিয়েছে। ফলে হাইকোর্টের আদেশ বলবৎ রয়েছে। আদেশমতো খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ দুটি বোর্ড মিটিং করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকও অনুমতি দিয়েছে। এখন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করবে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন কী করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হোক, সেটা তারা চায় না।
পি কে হালদার যে টাকা বিদেশে পাচার করেছেন, সেটা আনা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নে তানজীব উল আলম বলেন, পি কে হালদার যে টাকাটা দেশ থেকে বিদেশে পাচার করেছেন, সেটা আনার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকেরও না, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়েরও না। যেহেতু তিনি একটা অপরাধ করেছেন, এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। দুদক আছে। অর্থ পাচার আইনের বিষয়ে কয়েকটা প্রতিষ্ঠান আছে। ওইসব প্রতিষ্ঠান তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
আইনজীবী বলেন, যে দেশে টাকা পাচার হয়েছে, সে দেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। পত্রিকায় দেখেছি, তিনি সম্ভবত টাকাটা কানাডায় নিয়ে গেছেন। কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তিটা আছে। এ চুক্তির অধীনে সরকার যদি কানাডাকে জানায়, তিনি কানাডায় পাচার করা টাকা নিয়ে অবস্থান করছেন। তাহলে ওই চুক্তির আওতায় কানাডা সরকার সহযোগিতা করবে বলে আমার বিশ্বাস। সে অনুযায়ী টাকাটা নিয়ে আসতে হবে।
এর আগেও বিদেশে থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনার উদাহরণ আছে উল্লেখ করে তানজীব উল আলম বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন সিঙ্গাপুর থেকে কোকোর (প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো) পাচার করা টাকা এসেছে। একই পদ্ধতিতে কানাডা থেকেও আনা যাবে, যেহেতু চুক্তিটা আছে। এটার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে বিরাট ভূমিকা পালন করতে হবে। কানাডার সঙ্গে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিও আছে। যদি পি কে হালদারসহ তাদের সহযোগীদের প্রচলিত আইনে শাস্তির ব্যবস্থা হয়, তখন ওই শাস্তিকে প্রয়োগ করার জন্য চুক্তির অধীনে তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা যাবে।’
হাইকোর্ট পি কে হালদার ছাড়াও যাদের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁরা হলেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম নুরুল আলম, পরিচালক জহিরুল আলম, এম এ হাশেম, নাসিম আনোয়ার, বাসুদেব ব্যানার্জি, পাপিয়া ব্যানার্জি, মোমতাজ বেগম, নওশেরুল ইসলাম, আনোয়ারুল কবির, প্রকৌশলী নুরুজ্জামান, আবুল হাশেম, মো. রাশেদুল হক, পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, স্ত্রী সুস্মিতা সাহা, ভাই প্রিতুষ কুমার হালদার, চাচাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী, অভিজিৎ অধিকারী, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক পরিচালক ইরফান উদ্দিন আহমেদ ও পি কে হালদারের বন্ধু উজ্জ্বল কুমার নন্দী।