জ্বর নিয়ে ৩ হাসপাতাল ঘুরে রাজশাহী গিয়ে মারা গেলেন নওগাঁর যুবক
জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার যুবক আল আমিন (২২) মারা গেছেন। গতকাল শনিবার রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
আল আমিনের মৃত্যুসনদে চিকিৎসকরা লিখেছেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে নয়, তিনি মারা গেছেন মেনিনজাইটিস রোগে। তবে পরিবারের অভিযোগ, অসুস্থ অবস্থায় আল আমিন তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলেও করোনাভাইরাস সন্দেহে কেউ তাঁকে চিকিৎসা দেয়নি। একই কারণে তাঁকে নিজের গ্রামের বাড়িতেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে আল আমিনকে তাঁর নিজ গ্রাম উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের অলঙ্কারদীঘি গ্রামে দাফন করা হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের কৃষক মকলেছুর রহমানের ছেলে। গত চার বছর ধরে তিনি নারায়ণগঞ্জে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন।
নিহতের পরিবার জানায়, আল আমিন বাড়িতে ভারি কোনো কাজ করতে পারত না। পেটের তাগিদে প্রায় চার বছর আগে নারায়ণগঞ্জে একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ নেন।
কয়েকদিন আগে আল আমিনের জ্বর আর কাশি দেখা দেয়। গতকাল শনিবার সকালে তিনি প্রচণ্ড জ্বর আর কাশি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে রাণীনগরে আসেন। এ সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য ও গ্রামের কতিপয় লোক তাকে গ্রামে ঢুকতে বাধা দেয়।
তখন আল আমিনকে চিকিৎসার জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতাল ও আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানেও চিকিৎসকরা তাঁর চিকিৎসা না করে ফিরিয়ে দেন। এরপর আবারও তাকে নিয়ে এসে নিজ গ্রামের পাশের একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের বারান্দায় রাখা হয়।
পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু মণ্ডল বিষয়টি জানতে পেরে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সহযোগিতায় যুবক আল আমিনকে চিকিৎসার জন্য রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তাঁর অবস্থা বেগতিক দেখে চিকিৎসকরা তাঁকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠান। অবশেষে তিন হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আল আমিন।
নিহতের বাবা কৃষক মকলেছুর রহমান বলেন, ‘ছেলে আগে থেকেই এই রকম রোগে ভুগছিল। নারায়ণগঞ্জে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করত। ওখানে কাজ করে যা বেতন পেত তাই দিয়ে নিজের চিকিৎসা করে চলত সে। বাড়িতে কোনো টাকা-পয়সা দিতে পারত না আল আমিন।
আজ রোববার কালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘আল আমিন নামের ওই যুবক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি। তিনি মেনিনজাইটিস রোগে মারা গেছেন। চিকিৎসক মৃত্যু সনদে তা নিশ্চিত করে দিয়েছেন। নিজ গ্রামে তাঁর দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু বলেন, ‘ছেলেটা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, এমনটি খবর পাওয়ার পর তাঁর পরিবারকে বলেছি মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে গ্রামে আসেন। যদি করোনাভাইরাস না থাকে তাহলে সমস্যা নেই। আর যদি ভাইরাস থেকে থাকে তাহলে চিকিৎসা করান। গ্রামে আসা যাবে না।’ গ্রামের সবার নিরাপত্তার কথা ভেবে তারা বাধা দিয়েছেন বলে জানান ইউপি সদস্য।
রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কে এইচ এম ইফতেখারুল আলম খাঁন বলেন, ‘আল আমীনের শরীরে প্রচণ্ড জ্বর ছিল। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল মামুন বলেন, ‘ওই যুবক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি। তিনি মেনিনজাইটিস রোগে মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যু সনদে চিকিৎসক তা নিশ্চিত করে দিয়েছেন। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত না হয়ে ছেলেটাকে গ্রামে উঠতে না দেওয়াটা অমানবিক কাজ হয়েছে।’