চিকিৎসা না দিয়ে রোগী ফেরত পাঠানোর অভিযোগ নেই : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
চিকিৎসা না দিয়ে সাধারণ রোগী ফেরত পাঠানোর কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে রোগী ফেরত পাঠানোর অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আমিনুল হাসানের স্বাক্ষরে হাইকোর্টকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে প্রতিবেদন আসার বিষয়ে আইনজীবী এ কে এম এহসানুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের সব হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে। কিন্তু আমরা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লক্ষ করছি এমন ঘটনার খবর প্রকাশ পাচ্ছে।’ একই কথা বলেন রিটকারী অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ১১ জুন দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় কোভিড ও নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়।
তা ছাড়া অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা থেকে গত ১৮ জুন দেশের সব হাসপাতাল ক্লিনিককে নির্ধারিত ফির (ইউজার ফি) বিনিময়ে (কোভিড-১৯) রোগীর চিকিৎসা অব্যাহত রাখার জন্য এবং গত ২৯ জুন সব বেসরকারি হাসপাতালে সব ধরনের রোগীদের (কোভিড/ নন-কোভিড এরিয়া চিহ্নিত/ বিভাজনপূর্বক) সব ধরনের চিকিৎসা প্রদানের অনুমোদনপ্রাপ্ত ওআরটি পিসিআরের সুবিধাসংবলিত যেকোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট ফির বিনিময়ে চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এসব নির্দেশ পালনে অপারগতা প্রকাশকারী/ ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তাদের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত/ বাতিলের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে স্মারকে উল্লেখ করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি, তাই কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে এ ধরনের বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ৫০ বা তার অধিক শয্যার বেসরকারি হাসপাতালে (যেমন স্কয়ার, এভার কেয়ার, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল ইত্যাদি) নির্দেশনা মেনে কোভিড-১৯ ও নন-কোভিড রোগীদের পৃথকভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে।
এ প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। তবে রিটকারী আইনজীবীরা এ বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন ওই দিন না পাওয়ায় তাঁরা শুনানি করতে সময় নেন। তখন আদালত বিষয়টি নিয়ে ৬ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেন। এ সময় শুনানিতে রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক, অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামান, অ্যাডভোকেট এ এম জামিউল হক ফয়সাল, ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান ও মাহফুজুর রহমান মিলন।
এর আগে হাইকোর্টে পৃথক পাঁচটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গত ১৫ জুন এক আদেশে চিকিৎসা না দিয়ে সাধারণ রোগীদের ফেরত পাঠানোর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আদালত আদেশে অবহেলায় মৃত্যু, আইসিইউ বণ্টন, বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ, অক্সিজেন সরবরাহ ও ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকা লকডাউন নিয়ে মোট ১১ দফা নির্দেশনা ও অভিমত দেন। এসব নির্দেশনা ও অভিমতের মধ্যে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত পরের দিন সাতটি নির্দেশনা স্থগিত করে আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৬ জুন এই স্থগিতাদেশ দেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানের চেম্বার জজ আদালত।
এর আগে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভার্চুয়াল হাইকোর্টে পাঁচটি রিট করা হয়। বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ অধিগ্রহণ ও ‘সেন্ট্রাল বেড ব্যুরো’ স্থাপনার নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ডা. আবদুল আল মামুন।
অন্যদিকে, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সাধারণ রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন আইনজীবী এ এম জামিউল হক, মো. নাজমুল হুদা, মোহাম্মাদ মেহেদী হাসান ও ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান।
এ ছাড়া সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের নির্দেশনা চেয়ে জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে আরেকটি রিট করেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন। আর করোনা চিকিৎসায় সরকারি নির্দেশনার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ না নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করেন আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা। এ ছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রামণের প্রেক্ষাপটে ঢাকা শহরকে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা চেয়ে রিট করেন অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল ইসলাম।