চার আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির ২৫ জনের মনোনয়নপত্র জমা
করোনা মহামারির মধ্যেও আজ শুক্রবার সকালে কয়েক হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সরব হয়ে ওঠে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকা। ঢাকা-৫, ঢাকা-১৮, নওগাঁ-৬ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে ২৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী সকাল থেকে কর্মী-সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
মনোনয়নপত্রের মূল্যমান ১০ হাজার টাকা। ২৫ হাজার টাকা জামানতসহ প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম জমা দেন। আগামীকাল শনিবার বিকেল ৫টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হবে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার। তফসিল অনুযায়ী ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনে উপনির্বাচনে ভোট ১৭ অক্টোবর। ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল নির্বাচন কমিশন এখনো ঘোষণা করেনি।
আজ সকাল ৯টা থেকে ধানের শীষ, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি নিয়ে কর্মী-সমর্থকরা মিছিল নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হয়। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
রিজভী বলেন, ‘মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। বক্তব্য শুধু এটাই, যে দুঃশাসন চলছে, ভয়ঙ্কর নাৎসিবাহিনীর শাসনের মধ্যে গণতন্ত্র প্রসারণের জন্য যেখানে আমরা যতটুকু সুযোগ পাব, সেটা ব্যবহার করব।’
বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, ‘আমরা এর আগেও দেখেছি, নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন ও ভোট—এগুলোকে জাদুঘরে পাঠানোর জন্য সরকার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে। আমরা ১২ বছর নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করছি গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নেতা থেকে তৃণমূলের নেতা কারো ৫০ থেকে ২৫০-৩০০ মামলা নিয়ে এ সংগ্রামে অংশ নিচ্ছে। আমরা এসব উপনির্বাচনকে সংগ্রামের অংশ হিসেবে নিয়েছি।’
এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকা-১৮ আসনকে (উত্তরা) বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘১৯৯১ সালে এই আসন থেকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এখানে যত উন্নয়ন হয়েছে সব বিএনপির সময়ে হয়েছে। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে, ইনশা আল্লাহ এ আসনে ধানের শীষকে বিজয়ী করব। আমি বিশ্বাস করি দলের মনোনয়ন পেলে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারব এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।’
নওগাঁ-৬ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া আনোয়ার হোসেন বুলু বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অবদান আছে আমার। আশা করি এই উপনির্বাচনে আত্রাই-রাণীনগর থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বিজয়ের সংগ্রাম শুরু হবে আগামী নির্বাচনে আমার বিজয়ের মধ্য দিয়েই। ২০০৮ সালে নির্বাচনের পরে দুটি থানা, ১৬টি ইউনিয়ন, ১৪৪টি ওয়ার্ড, ৪৫০টি গ্রামে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের শক্তিশালী সংগঠন আছে এবং এ সংগঠনের নেতৃত্ব আমি দিয়েছি। ইনশা আল্লাহ দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে আগামী দিনে নওগাঁ-৬ আসন আমি উপহার দিতে পারব।’
চারটি আসনের মধ্যে ঢাকা-৫ আসনের জন্য আলহাজ সালাহউদ্দিন আহমেদ, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, নবী উল্লাহ নবী, মো. জুম্মন মিয়া ও আকবর হোসেন নান্টু, ঢাকা-১৮ আসনের জন্য এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, এম কফিল উদ্দিন, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, ইসমাইল হোসেন, বাহাউদ্দিন সাদি, মোস্তফা জামান সেগুন, মো. আখতার হোসেন, আব্বাস উদ্দিন, নওগাঁ-৬ আসনে আনোয়ার হোসেন বুলু, আবদুস শুকুর, এম এম ফারুক জেমস, মাহমুদুল আরেফিন স্বপন, ইসহাক আলী, আতিকুর রহমান রতন মোল্লা, শেখ মো. রেজাউল ইসলাম, মো. শফিকুল ইসলাম, আবু সাঈদ রফিকুল আলম রফিক এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনে বি এম তাহজিবুল ইসলাম, নাজমুল হাসান তালুকদার রানা ও রবিউল হাসান মনোনয়নপত্র জমা দেন।
গত ৯ জুলাই সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে ঢাকা-১৮ আসন এবং গত ৬ মে বার্ধক্যজনিত কারণে সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা ইন্তেকাল করলে ঢাকা-৫ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ড এবং ঢাকা মহানগরের ডেমরা, দনিয়া, মাতুয়াইল ও সারুলিয়া ইউনিয়ন নিয়ে এ আসন গঠিত।
এ ছাড়া গত ১৩ জুন মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি ও গত ২৭ জুলাই আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে নওগাঁ-৬ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ৪ ধারা অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদের কোনো আসন শূন্য হলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তবে কোনো দৈব-দুর্বিপাকের কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আরো ৯০ দিন সময় পাবে নির্বাচন কমিশন।