চান্দুর তিনটি স্পিডবোটই অবৈধভাবে চলত
চাঁন মিয়া ওরফে চান্দুর তিনটি স্পিডবোট। তিনটিই চলত অবৈধভাবে। অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় তিনি সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও বোটের যাত্রী পরিবহন করছিলেন। এবং ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করছিলেন বলে জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ীর বাংলাবাজার পুরোনো ঘাটে নোঙর করা বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডকে ধাক্কা দিয়ে ডুবে যায় একটি স্পিডবোট। গত সোমবারের ওই ঘটনায় ২৬ জন নিহত হয়। ওই ঘটনায় করা মামলার এজাহারনামীয় আসামি স্পিডবোটের মালিক চাঁন মিয়া ওরফে চান্দুকে গতকাল শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘চান্দু অতিরিক্ত মুনাফার আশায় লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্পিডবোটে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ করে আসছিলেন। তার মোট তিনটি স্পিডবোট রয়েছে। তিনটিই অনুমোদনহীন। তবে যে স্পিডবোটটি ডুবে গেছে, সেটির জহিরুল হক মানের আরও একজন মালিকের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে একক মালিকানায় চাঁন মিয়ার আরও দুটি স্পিডবোট রয়েছে। তিনি পাঁচ বছর ধরে এভাবে ব্যবসা করে আসছিলেন।’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আরও বলেন, ‘আমরা জেনেছি, ডুবে যাওয়া ওই স্পিডবোটটির ধারণক্ষমতা ছিল ২০ জনের। কিন্তু বোটটিতে যাত্রী নেওয়া হয়েছিল ৩২ জন। পরে তো ২৬ জন মারা যায়। এ ঘটনায় একটি মামলা করা হয়। সেখানে মোট চারজনকে আসামি করা হয়। এক নাম্বার আসামি স্পিডবোটের চালক শাহ আলম। আর দুই নাম্বার আসামি চাঁন মিয়া। তিন নাম্বার আসমি জহিরুল হক। শাহ আলম নামের আরেকজন ইজারাদার এই মামলার আসামি।’
শুধু এই একটি স্পিডবোট নয়, বিধিনিষেধের মধ্যে আরও স্পিটবোট চলছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ওখানে কয়েকটি সংস্থা বা সংগঠনের মাধ্যমে এ ব্যবসা পরিচালিত হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে র্যাব যদি কখনো অনিয়ম দেখে, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আমরা চাঁন মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যা জানতে পেরেছি, এসব ব্যবসায়ীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে এভাবে অতিরিক্ত লাভের আশায় ব্যবসা করে থাকে।’
এ দিকে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি আজ দুপুরে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। তদন্ত কমিটির প্রধান স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. আজহারুল ইসলাম এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। চালক মাদকাসক্ত হওয়ায় পদ্মায় স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণ গেছে বলে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে এ তথ্য উঠে এসেছে।
পরে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, মাদকাসক্ত অবস্থায় চালক শাহআলম স্পিডবোট চালানোয় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। বড় দুর্ঘটনার আগে তিনি মাঝ পদ্মা নদীতে আরেকবার দুর্ঘটনায় পড়তে যাচ্ছিলেন। তখন যাত্রীদের সতর্কতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেনি। পরবর্তীতে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার আরও উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, ঘাটে সিন্ডিকেট ও অব্যবস্থাপনা এবং লাইফ জ্যাকেট ছাড়া অতিরিক্ত যাত্রীবহন করে পদ্মা পারাপার।